1. [email protected] : দৈনিক বিজয়ের বানী : দৈনিক বিজয়ের বানী
  2. [email protected] : Hasan :
  3. [email protected] : dev : dev
উত্তরবঙ্গের শিক্ষার অগ্রদূত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মাদার বখশ। - dainikbijoyerbani.com
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন
ad

উত্তরবঙ্গের শিক্ষার অগ্রদূত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মাদার বখশ।

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১
  • ১৩২ Time View

সামাউন আলী সিংড়া (নাটোর)সংবাদদাতাঃ

১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাজশাহী জেলার নাটোর মহাকুমার (বর্তমানে নাটোর জেলা) সিংড়া থানার অন্তর্গত স্থাপনদিঘি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাদার বখশ ছিলেন রাজশাহীর গণমানুষের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। দেশনন্দিত সমাজসেবক ও উত্তরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম অগ্রদূত তিনি।

উত্তরবঙ্গের শিক্ষার অগ্রদূত মাদার বখশ।
মাদার বখশ ১৯২২ সালে সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৪ সালে রাজশাহী কলেজ হতে আই.এ, এবং ১৯২৬ সালে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯২৮ সালে ইতিহাসে এম.এ এবং কলকাতা রিপন কলেজ হতে ১৯২৯ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন।

বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁ পোরসার মাদ্রাসায় এবং মুর্শিদাবাদের উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও করেন তিনি। মাত্র দু’বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি ১৯৩৪ সালে রাজশাহী জজকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। এই পেশায় তিনি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দরিদ্র বিচারপ্রার্থীদেরকে তিনি স্বল্প পয়সায় এবং কখনও বিনা পায়সায় আইনি সহায়তা দিতেন।

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’এ ব্রত কে সামনে নিয়ে মাদার বখশ উত্তর বঙ্গের অবহেলিত-বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন। মাদার বখশ এর একান্ত প্রচেষ্টা আর অধিকার আদায়ে দৃঢ়তার কারণে উত্তরবঙ্গের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয় তিনি রাজশাহীতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

রাজশাহী কোর্ট একাডেমি (১৯৫৪ সালে সোবহানিয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়)সেটি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাদার বখশ এর প্রচেষ্টাতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৬০ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজও স্থাপিত হয় মাদার বখশ এর অবদানে।

শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ রাজশাহীতে একটি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম চিকিৎসা সেবাদানের নিমিত্তে একটি প্রাইভেট মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে। এই মেডিক্যাল স্কুলটি সরকার ১৯৫৫ সালে গ্রহণ করে। এরপর ১৯৫৮ সালে মেডিক্যাল স্কুলটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রুপান্তরিত হয়।

শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবায়ও অনন্য অবদান রেখে গেছেন। মাদার বখশ ১৯৫০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৪ সালের ২২ জুন পর্যন্ত রাজশাহী পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আমলেই তৎকালীন রাজশাহী পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। মাদার বখশ তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে জনগণের বিপুল ভালবাসা অর্জন করেন। তিনিই রাজশাহী নিউ মার্কেটের রুপকার।

মাদার বখ্শ ১০লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী নিউমার্কেট নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম রাজশাহী শহরে রিকশা চালু করেন এবং তিনিই প্রথম সুইপারদের রেশন প্রদানসহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। শাহ মখদুম ইন্সটিটিউট, মুসলিম গোরস্থান কমিটি, রিফ্যুজিদের বাসস্থান ব্যবস্থা, পদ্মার বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে মাদার বখশ এর অবদান জড়িয়ে আছে।

১৯৪৬ সালে তিনি আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা থানা নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরেও ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ আইন সভার সদস্য ছিলেন। ওই সময়ে সরকার উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রতি চরম বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরন করতে থাকে। এরই প্রতিবাদে মাদার বখশ প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫৩ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ভূবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা না হয়, তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷’ মাদার বখ্শের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে৷ টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়৷

সততা, নিষ্ঠা, প্রতিভা আর মেধা দিয়ে তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেন। অন্যায়-অবিচারের প্রতি সর্বদা সোচ্চার এই মহামানব বিশিষ্ট রাজনীতিক সমাজসেবক হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার এবং আইনবিদ খান বাহাদুর এমাদউদ্দিন এর মৃত্যুও পরে তাঁদের শূণ্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হন। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে তিনি মুসলিম লীগের একজন অন্যতম নীতি নির্ধারক হন।

নিরলস শ্রম, সাধনা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তিনি জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ভাষা আন্দোলনের সময়েও মাদার বখশের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। তিনি তৎকালিন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া না হয়, তবে আমি আইন পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করবো।’

ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় রফিক, সালাম, জব্বার নিহতের পর মাদার বখশ এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘খুনী নূরুল আমিন সরকারের আইন পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।’ তখন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা হয়েও মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুরে কথা বলা এবং ঘাতক নূরুল আমিনের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে সাহসিকতা ও সততা দেখিয়েছিলেন। আর এই কারণে মাত্র কয়েক দিন পর রাজশাহীর সংগ্রামী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তিনিও কারারুদ্ধ হন।

মহৎ ও জনহিতৈষী প্রাণের অধিকারী মাদার বখশ চির জাগরুক হয়ে থাকবেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কাছে। শিক্ষা বিস্তার ও জনকল্যাণের জনক হিসেবে পরিচিত মাদার বখশ এই অঞ্চলের মানুষকে আলোকিত করে গেছেন তাঁর আজীবন সাধনা আর ত্যাগের মাধ্যমে। এই কীর্তিমান মানুষটি ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।

ad

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ad
ad
© All rights reserved 2022
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সীমান্ত আইটি