রুবেল মিয়া
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। একারণে দীর্ঘ দেড়বছর পর প্রতিষ্ঠান চালু হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলায় ১১টি কলেজ, ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৯টি মাদরাসা রয়েছে। কোভিড-১৯ জনিত কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। এ অবস্থায় অনেক অভিভাবক মেয়েদের বিয়ে দেয়ার বিষয়ে ঝুঁকে পড়ে। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুযোগ বুঝে বিয়েও দিয়েছে অনেকে।
উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্কুল ও মাদরাসার ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির এক বা একাধিক শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বিএল উচ্চবিদ্যালয়ের ১৫জনের অধিক শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়টি থেকে ১০৯জন শিক্ষার্থী জেএসসি পাস করলেও ৪জন শিক্ষার্থী ৯ম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন করেননি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহমত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের সিঙ্গারডাবরী হাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ১০ম শ্রেণিতেই ১০জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অন্যান্য শ্রেণির কত শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাল্য বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ।
ছিনাই ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পাঁঙ্গা রানী লক্ষ্মী প্রিয়া স্কুল এ- কলেজে করোনাকালীন সময়ে ৩০জনেরও বেশি ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের জেএসসিতে ১৩৭জন পাস করলেও ৯ম শ্রেণিতে ১২২জন রেজিষ্ট্রেশন করেছে।
একই ইউনিয়নের বৈদ্যের বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭জন জেএসসি পাস করলেও ৯ম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন করেছে ৪২জন শিক্ষার্থী। এই বিদ্যালয়েও ১৫জনের অধিক শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৭ম শ্রেণির, ৮ম শ্রেণির ও ১০ম শ্রেণির ছাত্রীও রয়েছে। একই অবস্থা উপজেলার প্রায় সকল হাইস্কুল ও মাদরাসায়।
একই ভাবে উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের ফরকের হাট কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০জনেরও অধিক শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ে ১২১জন জেএসসি পাস শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০জন শিক্ষার্থী ৯ম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন করেনি।
উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়েরই কমবেশি শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস ও ব্র্যাক সহ বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাজারহাট উপজেলার ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ৭শতাধিক শিক্ষার্থীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও গড়ে ২০শতাংশেরও অধিক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রাজারহাট কারিগরি বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন সরকার জানান, তার কলেজের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ৪০জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রামের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী সংকটে ভূগতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন।
পাঁঙ্গা রানী লক্ষ্মী প্রিয়া স্কুল এ- কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুহিন পাটোয়ারী বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ৩০জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার ১০শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের বাল্য বিয়ে বা ৯ম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশনের তথ্য সংরক্ষনের বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই। #সংযুক্ত
Leave a Reply