1. [email protected] : দৈনিক বিজয়ের বানী : দৈনিক বিজয়ের বানী
  2. [email protected] : Hasan :
  3. [email protected] : dev : dev
ডাকাতি নয়, সম্পত্তির লোভেই বিলকিসকে যেভাবে হত্যা করে ৩ জন - dainikbijoyerbani.com
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
ad

ডাকাতি নয়, সম্পত্তির লোভেই বিলকিসকে যেভাবে হত্যা করে ৩ জন

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩
  • ১০১ Time View

মোঃ সোহেল রানা  ( বরগুনা )
বরগুনার বেতাগীতে বসতঘরে ডাকাতি পর তিন সন্তানের মাকে হত্যার ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্যা টাউন’। প্রাথমিকভাবে সকলের কাছে এটি ডাকাতি মনে হলেও হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর বেড়িয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা ওই ক্লুলেস (আলামতবিহীন) হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও ওই বসতঘরের ভাড়াটিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবদুর রহমান জুয়েল নিজেই কোর্টে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।

ওই দিন বৃদ্ধার বসতঘরে কোনো ডাকাতি হয়নি, বরং পরিকল্পিতভাবেই সম্পত্তির লোভে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বৃদ্ধা বিলকিস বেগম নামের ওই বাড়িওয়ালিকে। হত্যার পর ওই বৃদ্ধাকে নারকীয় উল্লাসে ধর্ষণ করেন খুনি এবং পরে সাজান ডাকাতির নাটক। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের তদন্তে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিলকিস বেগম ঈদ উদযাপন করার জন্য ঘটনার দুই দিন আগে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন। তার স্বামী আ. মান্নান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করতেন। ২০২০ সালে তিনি করোনায় মারা যান। তার দুই ছেলেও সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করেন। সেই সুবাদে তিনিও ছেলেদের সাথে ঢাকায় থাকতেন।

এদিকে বাড়িতে কেউ না থাকায় দেখাশোনাসহ বসবাসের জন্য স্বল্প টাকার চুক্তিতে ভাড়া দেন মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুর রহমান জুয়েলের কাছে। যেখানে সপরিবারে বসবাস করতেন তিনি।  ছেলে ও তাদের স্ত্রী এবং নাতিরা ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে আসবেন বলে বাড়িঘর গোছাতে বিলকিস আগেই চলে আসেন।

শুক্রবার বরগুনা ডিবি পুলিশের ওসি মো. শহিদুল ইসলাম খান লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডটির বিষয়ে জানান, গত ২৩ জুন রাতে বসতঘরে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতির নাটক সাজান নিহত বিলকিস বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবদুর রহমান জুয়েল। এলাকাবাসীসহ নিহত বিলকিসের স্বজন প্রশাসনের কাছে দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ও তার পরিবার ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা কিছুই জানেন না। পরে জুয়েলের স্ত্রীকে ডিবির কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এক পর্যায়ে খুনি জুয়েল নিজেই সব ঘটনার ব্যাখা দিতে শুরু করেন।

হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত ও কারণ: ঈদে বাড়িতে এসে ঘর নোংরা দেখে ভাড়াটিয়া ও দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা জুয়েলকে (৩৩) বকাবকি করেন বিলকিস বেগম। এ নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। জুয়েল তখন জানান, তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাড়িঘর নোংরা হয়েছে। পরে ঝগড়ার বিষয়টি জুয়েল তার ঘনিষ্ঠ ওই এলাকার নির্মাণশ্রমিক হিরুকে (৩৮) জানান।

তাকে বলেন, প্রতিবার ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে ঝগড়াঝাটি করে, তার আর ভালো লাগে না।’ তখন হিরু বলেন, ‘ওপারে পাঠিয়ে দাও। বুড়া মানুষ মরলে তেমন কোনো ঝামেলাও হবে না, জমিজমা তোমার হয়ে যাবে। তার ছেলেরা ঢাকায় থাকে, ঢাকায় চাকরি করে। চাকরি ছেড়ে তারা আর জমিজমা খেতে গ্রামে আসবে না। এই জমিজমা তোমার হয়ে যাবে।

ডিবির ওসি বলেন, হিরুর ওই পরামর্শে তখনই মনে মনে বিলকিস বেগমকে হত্যার পরিকল্পনার ছক আঁকেন জুয়েল। হত্যা শেষে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলে প্রচার করে দেবেন, যাতে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন। কারণ ওই সময়ে বেতাগীতে ডাকাতের আনোগোনার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল।

যেভাবে হত্যা করা হয় বিলকিস বেগমকে: কিলিং মিশন সফল করতে জুয়েল ও হিরু তাদের আরেক ঘনিষ্ঠ স্থানীয় মুদি দোকানদার মাসুদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলেন এবং সম্পত্তির লোভ দেখান। তাকেও কিলিং মিশনে জড়িত করেন। কিন্তু ওই বাড়িতে ঢোকার আগে কেউ কাউকে মোবাইলে কল করবেন না বলেও পরিকল্পনা করেন। মোবাইল ট্র্যাকিং এড়াতেই তারা এমন পরিকল্পনা করেন। তবে যোগাযোগের জন্য তারা বেছে নেন ভিন্ন এক মাধ্যম তথা বিলকিস বেগমের বাড়ির উঠানে থাকা টিউবওয়েল। সেটিতে কয়েকটি চাপ দিলে শব্দ হলেই একে—অপরের উপস্থিতি টের পাবেন এবং বিলকিসের দরজার সামনে আসবেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ জুন রাতে মাওলানা জুয়েল তার অসুস্থ স্ত্রীকে জ্বরের ওষুধের পাশাপাশি লম্বা সময় ঘুম পাড়িয়ে রাখতে আরেক ওষুধ খাইয়ে দেন এবং জোরে সিলিং ফ্যান ও চার্জার ফ্যান ছেড়ে দেন। মধ্যরাতে হত্যাকাণ্ডের সহযোগী হিরু এসে টিউবওয়েলে জোরে জোরে কয়েকটি চাপ দিলে ভাড়াটিয়া জুয়েল দরজা খুলে হিরুকে নিয়ে ঘরে ঢোকেন। বাইরে পাহারায় থাকেন আরেক সহযোগী মুদি ব্যবসায়ী মাসুদ। ঘরে ঢুকে জুয়েল ঘুমন্ত বিলকিস বেগমের বুকের ওপরে উঠে গলাটিপে ধরেন আর হিরু পা চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির শব্দ যেন না হয় সেজন্য বিলকিস বেগমের মুখে তোয়ালে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও জানান, জুয়েল ও হিরু কিলিং মিশন শেষে ঘরের মালপত্র তছনছ করে ছড়িয়ে—ছিটিয়ে রাখেন। একই সঙ্গে জানালার গ্রিল কেটে মেঝেতে রাখেন, যেন সবাই মনে করে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ঘটনা শেষে জুয়েল বিলকিস বেগমের স্বর্ণালঙ্কার হিরুকে দিয়ে দেন। হিরু চলে যাওয়ার পর জুয়েল ঘরে ঢুকে বিলকিসের মৃতদেহকে নারকীয় উল্লাসে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার পর বিলকিসের মরদেহে একাধিক আঘাত করেন, যেন সবাই মনে করে ডাকাতরা বিলকিসকে মারধর ও ধর্ষণ করেছে। পরে জুয়েল এসে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠে জুয়েল তার স্ত্রী বিলকিস বেগমকে ডাকাডাকি করেন এবং দুজন মিলে হিরুকে ফোন দেন। হিরু এলে তারা প্রথমে বিলকিস বেগমের মেয়ে জামাই বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (কর্মরত) তাকে খবর দেন। পরে ঢাকায় তার ছেলেদের খবর দেওয়া হয়। সবাইকে বলা হয়, বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে এবং বিলকিস বেগমকে হত্যা করা হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম খান  আরও বলেন, বরগুনা ডিবির ওপর ক্লুলেস এই হত্যা মামলা তদন্তের নির্দেশ এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হই। জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। প্রধান আসামি জুয়েলকে বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল আদালতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে তিন দিনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের অপর দুই সহযোগী হিরু ও মাসুদকে গ্রেফতারসহ নিহত বিলকিস বেগমের স্বর্ণলংকার জব্দ করা হয়।

ad

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ad
ad
© All rights reserved 2022
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সীমান্ত আইটি