দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ
সেতু না থাকায় ৫০ বছর ধরে রশি টেনে খেয়া পার হচ্ছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা-আলীপুর এলাকার মানুষ।
উপজেলার টেংরাটিলা – আলীপুর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খাসিয়ামারা নদীতে সেতু না থাকায় এই খেয়াঘাট দিয়ে রশি টেনে খেয়া পারাপার হতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাওরপাড়ের জনসাধারণকে প্রতিনিয়তো ঝুঁকি নিয়ে পারি দিতে হয় এই পাহাড়ি নদীটি। কৃষি নির্ভর ও মৎস্যচাষে বিখ্যাত হাওর বেষ্টিত সুরমা ইউনিয়নের ১০-১৫টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৎস্য খামার, সবজি চাষ ও বোরো ধান আবাদ করে আসছেন। কিন্তু যোগাযোগের এই নাজুক ব্যবস্থার কারণে চাষী ও মৎস্য খামারিদের গুনতে হয় বাড়তি খরচ ।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরা-আলীপুর বাজারের নিকটবর্তী খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও আজোবধি এখানে নির্মিত হয়নি কোনো সেতু। নাজুক এই যোগাযোগ ব্যাবস্থার কারনে উপজেলার সুরমা ও লক্ষীপুর ইউনিয়নের টেংরাটিলা, আলীপুর, আজবপুর, গিরিসনগর, পশ্চিম টিলাগাঁও, নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রাম, সুলতানপুর, বড়কাটা, বৈঠাখাই, হাছনবাহার, এরুয়াখাই, রসরাই, সোনাপুরসহ এলাকার অন্তত ২০-২৫ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদেরকে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ ।
সেতুর অভাবে যোগাযোগ ব্যাবস্থার দূর্ভোগের শেষ বলতে কিছু নেই এখানকার বাসিন্দাদের। উপজেলার এই নদীটি পাহাড়ি খরশ্রুতা হওয়ায় এমনিতেই আতঙ্কে থাকেন দুই তীরের মানুষ। একটু বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়িঢলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এমনকি সারাদেশের কোন নদ নদীতে পানি না থাকলে ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা যায় দুই ইউনিয়নের শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। বর্ষা ৬ মাস নদীতে থাকে প্রচন্ড পানি আর স্রোত।
শত বাধা উপেক্ষা করেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট্ট হাত নৌকায় রশি টেনে নদীর দুই তীরের মানুষ পারাপার হয় । উপজেলা সদর ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় রশি টেনে নদী পার হওয়া কত যে ভূগান্তির ও দূর্ভোগ এটা সুধু এই এলাকার ভূক্তভুগি মানুষজনি জানে।
সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মৎস্য খামারি আব্দুর রহিম বলেন, ‘সেতু না থাকায় আমরা যে কত দুর্ভোগে আছি আমরাই জানি কিন্তু তা দেখার মতো কেউ নেই । বছরের ১২ টি মাসই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নদী পারাপার হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাতায়াত সহ মৎস্য খাদ্য পরিবহ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুতেই গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যায়।
নূূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মশিউর রহমান জানান,
হাওরপাড়ের শিক্ষা, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে
‘খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নির্মিতর মধ্যদিয়ে । স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এমপি আমাদের এখানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় উনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি সেতু নির্মানের টেন্ডার হয়েছে। হাওড়পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ঘুচবে দ্রুত সেতুটিু নির্মাণ কাজ শুরু হলে।
দোয়ারাবাজারে দায়িত্বরত এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, সুরমা ইউনিয়নের খাসিমারা নদীতে প্রস্তাবিত সেতুর টেন্ডার হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply