মাজহারুল ইসলাম বাদল।
ডিএনডির জলাবদ্ধতায় ৪ প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত
১১টি খালের সংস্কার আর ডিপিডিসির বিদ্যুৎ সংযোগে প্রতিবন্ধকতায় ডিএনডির জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের অন্যতম অন্তরায় বলে জানিয়েছেন ডিএনডির মেগা প্রজেক্টের সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প চলমান থাকলেও অতিবৃষ্টির কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ডিএনডি বাঁধ এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা।
রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে অনুষ্ঠিত এক সমন্বিত বৈঠকে উঠে আসে এই চিত্র।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইল বিল্লার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান, ডিএনডি প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আহসানুথ তাকবিম চৌধুরী, র্যাব-১১ এর মেজর তালুকদার নাজমুস সাকিব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা।
ওই বৈঠক চলাকালেই এমপি শামীম ওসমান মোবাইলে কথা বলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের সঙ্গে। উপমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেছেন, আগামী রোববার তিনি সরেজমিন ডিএনডি এলাকাটি পরিদর্শনে আসবেন। এ সময় তিনি ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে ডিএনডি প্রকল্পের আওতাভুক্ত না হলেও ফতুল্লার লালপুর এলাকার প্রায় ৭ লাখ পানিবন্দি মানুষের জন্য পানি নিষ্কাশনে কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনডি মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল আহসানুথ তাকবিম চৌধুরী।
এসময় তিনি জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো ডিএনডি বাধ অভ্যন্তরে ৩৬টি শাখা খাল রয়েছে; যেগুলোর ১০টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নয়। ওই ১০টি খাল সংস্কার বা পুনখনন করতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ও ডিমারগেশন (সীমানা নিরূপণ) প্রয়োজন। এই কাজটি হয়ে গেলে সবগুলো শাখা খাল দিয়ে জলাবদ্ধতার পানি শিমরাইল পাম্প হাউজের মূল খালে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে আদমজী নগরের প্রায় ৯শ মিটারের একটি খাল খনন প্রয়োজন, তা না হলে মূল খালে পানি আসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই ওই খালের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে তার মূল্য পরিশোধ করা হলেও এখনও পর্যন্ত আমাদের খালের জায়গাটি বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ডিএনডির প্রজেক্টের জন্য ৭টি আধুনিক পাম্প চালানোর জন্য ডিপিডিসিকে সংযোগ ফি প্রদান করা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের সংযোগ দিচ্ছে না। আমরা এখন ট্রান্সফরমার দিয়ে ৪টি পাম্প চালাচ্ছি। কিন্তু এই সংযোগটি হয়ে গেলে আমাদের ৭টি অত্যাধুনিক পাম্প চালাতে আর কোন সমস্যা হবে না এবং বর্ষাকালে এই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে আমরা মানুষকে মুক্তি দিতে পারবো।
এসময় প্রকল্পের পরিচালক লে.কর্নেল আহসানুথ তাকবিম চৌধুরী সংস্কারকৃত খালগুলোকে বারবার সংস্কার করতে হচ্ছে বলে আক্ষেপের সুরে জানান, আমরা এক খাল ৫ বারও সংস্কার করেছি, পরিষ্কার করেছি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সেগুলোকে ময়লা ফেলে আবার ভরাট করে ফেলেন। এই অসচেতনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ।
বৈঠকে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান বলেন, যখন ডিএনডি তৈরি করা হয়েছিল তখন ডিএনডি ছিল বেহেশতের টুকরো। কিন্তু এখন তা অভিশাপ। কারণ যুগে যুগে এই ডিএনডির খালগুলোকে দখল করা হয়েছে। নিজ এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ১৩শ’ কোটি টাকার প্রজেক্ট চলাকালেও অনেক খাল একদিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে আরেক দিকে ভরে যাচ্ছে। লিংক রোডের কাজের জন্য প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই আট কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলো রয়েছে সেগুলোর সংযোগ ছিল। আমাদের ডাবল রেললাইনের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইন তৈরি করছেন। সেই রেললাইন তৈরি করার পর যেখান দিয়ে পানি সাব-রেজিস্টার অফিসের পাশের খাল হয়ে বেরিয়ে যেত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি সেই এলাকার চেয়ারম্যানদের বলেছি সেটে ভেঙে ফেলুন, প্রয়োজনে আমার ওপর দায় দিবেন।
তিনি আরও বলেন, ফতুল্লার কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা আছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা ১০টি করে অস্থায়ী পাম্প বসাতো। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। আমাদের আরেকটি এলাকা আছে যা অভিশপ্ত এলাকা হয়ে গেছে। সেটা হলো ফতুল্লার লালপুর এলাকা। সেই জায়গাটা হলো নিচু এবং পানি বের হওয়ার যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলো উঁচু। নিচু জায়গা থেকে তো পানি উঁচু জায়গায় যেতে পারবে না। ডিএনডির খাল হচ্ছে। তার সঙ্গে যদি লোকাল ড্রেনের সংযোগ না করি তাহলে পানিটা যাবে কীভাবে? এই সমন্বয়হীনতার একটি সমস্যা।
শামীম ওসমান আরও বলেন, এখানে জনসচেতনতার একটা ব্যাপার আছে। ড্রেন পরিষ্কার করার বাজেট একবারই আসে। পরিষ্কার করার পর দেখা যায় ড্রেনটা দুই-তিন মাসে ভরে যাচ্ছে। ময়লার সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সমস্যাটা কমে যেত। দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনকে ডাম্পিং করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জালকুড়ির মানুষের চরম আপত্তির পরেও জেলা প্রশাসন ওই জায়গা বরাদ্দ দেন। আজ পর্যন্ত সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ময়লাটা ফেলানো হচ্ছে লিংক রোডের পাশে।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও ডিএনডি মেগা প্রজেক্টের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা করা উচিত বা প্রয়োজন আমরা সেটা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
Leave a Reply