বালাগঞ্জে নিরিহ লোকজনকে মামলা দিয়ে হয়রানি
ভূমি জালিয়াত চক্রের প্রতারণা।
সিলেট ব্যুরো:
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বালাগঞ্জ ইউনিয়নের দিগরবেড়কূড়ি মৌজার প্রায় পঞ্চাশ একর সরকারি ভূমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। এসব ভূমি উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন নির্বিকার বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
দিগরবেড়কূড়ি মৌজায় সরকারি ভূমি দখলদারদের মধ্যে একজন হলেন বালাগঞ্জ ইউনিয়নের করচারপার গ্রামের মজাহিদ মিয়া ওরফে মজাই। মজাইর খপ্পড়ে পড়ে নি:স্ব হয়েছেন রাধাকোনা প্রাইমারী স্কুলের দপ্তরী কাম প্রহরী রুবেল মিয়া। ভূমি বিক্রির নামে মজাই প্রতারণা করে রুবেলের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। সেই টাকা আত্মসাৎ করতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে রুবেলকে হয়রানি করা হচ্ছেন বলে তার স্বজনদের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক মাস পূর্বে মজাই সরকারি ভূমির মালিকানা দাবি করে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে রুবেলের কাছে ১৫ শতক ভূমি কাছে ১লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন। একইভাবে রাধাকোনা গ্রামের ঠেলা চালক সুরুজ ও তার ভাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজমানসহ তাদের এক আত্মীয়’র কাছে ২লক্ষ টাকায় ৩০শতক ভূমি বিক্রি করেন মজাই। বিক্রিত ভূমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য মজাইকে বারবার তাগিদ দিলেও তিনি কর্ণপাত করেননি বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
গত বছরের ৩ডিসেম্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য উপজেলা প্রশাসন মজাইর বিক্রিত সেই সরকারি ভূমি চিহ্নিত করেন। তখন ভূমি ক্রেতারা বুঝতে পারেন- ভূমি বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মজাই তাদের সাথে প্রতারাণা করেছেন। বিক্রিত ভূমির বিনিময়ে নেয়া টাকা ফেরৎ চাইলে মজাই মামলা-হামলার ভয় দেখিয়েছিলেন বলে ভুক্তভুগীদের অভিযোগ।
এদিকে, ২১ মার্চ ভূমি ক্রয়ের জন্য দেয়া টাকা চাইতে গিয়ে মজাই ও তার চাচাতো ভাই কাবিলের হাতে বালাগঞ্জ বাজারে হামলার শিকার হন সুরুজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মজাই-কাবিলের লোকজন গ্রাম থেকে ট্রাকে করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাজারে উঠে সুরুজ এবং তার ভাই ও ছেলের ওপর কয়েক দফা হামলা করলে তারা গুরুতর আহত হন। বালাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মজাইর চাচাতো ভাই দাঙ্গাবাজ কাবিল ও তাদের সহযোগি সুয়েবকে চায়নিজ কুড়াল এবং দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর আদালতে প্রেরণ করে।
হামলার ঘটনায় সুরুজের ভাই আজমান আলী বাদি হয়ে মজাই ও কাবিলসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২২মার্চ বালাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৩। পর দিন ২৩ মার্চ মজাই তার পিতা মাকন মিয়াকে বাদি বানিয়ে বালাগঞ্জ থানায় একটি মামলা রেকর্ড করান। ওই মামলায় মজাইর কাছ থেকে ভূমি ক্রয়কারী দপ্তরী রুবেল মিয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করে আজমান ও সুরুজসহ ৮জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
দপ্তরী রুবেলের পিতা নওশাদ উল্যা বলেন, ওই ভূমি জালিয়াত চক্র কাগজপত্র সঠিক আছে বলে আমাদের কাছে জায়গা বিক্রি করেছিল। আমার ছেলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা আত্মসাৎ তরতে ষড়যন্ত্র করে মজাই আমার ছেলেকে মামলায় আসামী করেছে। রাধাকোনা ও করচারপার গ্রামের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সরকারি ভূমি দখলকারী প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে মজাই ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে সরকারি ভূমি বিক্রির নামে সে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এবিষয়ে মজাহিদ মিয়া ওরফে মজাই’র সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা মাকন মিয়া বলেছেন উপজেলা প্রশাসন সেই জায়গা নিয়ে গেলে পাওনাদারদের টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা বলেছিলাম। এনিয়ে মারামারির সৃষ্টি হলে আমাদের লোকজনও আহত হয়েছেন।
বালাগঞ্জ থানার ওসি গাজি আতাউর রহমান বলেন, ভূমি ক্রয়ের জন্য দেয়া টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ মামলা দিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
Leave a Reply