কাকন সরকার শেরপুর প্রতিনিধিঃ
আজ ৩০ এপ্রিল শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আজকের এই দিনে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে বর্বর হামলা চালায় পাক হানাদার বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তারা সেদিন প্রায় ৪২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং আহত হয় অন্তত আরো অর্ধশতাধিক মানুষ। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয় দুইশ’রও বেশি বাড়ি-ঘর।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছর পর জেলার পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এঁর উদ্যোগে প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালিত হলো। শেরপুর পুনাক এর সভাপতি সানজিদা হক মৌ এর সভাপতিত্বে ও ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল আলম ভুইয়া’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল, শেরপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের সভপতি দেবাশীষ ভট্রাচার্য, শহীদ স্বজন সহযোগী অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, আবুল কালাম আজাদ, সুভাস রায়, উমেদ আলী, ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় ৮১টি শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি পুনাক শেরপুর জেলার উদ্যোগে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
শেরপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে জগৎপুর গ্রামের অবস্থান। সেদিনের সেই হামলার ভয়াল স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে থাকা মানুষরাই জানান সেদিনের সেই ভয়াবহতার কথা। জানা যায় শহীদের আত্মদানের অশ্রুমাখা গাঁথা, মুক্তিসংগ্রামের মর্মন্তুদ কাহিনী।
জগৎপুর গ্রামের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেদিন ছিল ১৬ বৈশাখ, ৩০ এপ্রিল শুক্রবার। সকাল ৮টার দিকে জগৎপুরের সামনের শংকরঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাকবাহিনী জগৎপুর গ্রামটিকে ৩ দিক থেকে ঘিরে ফেলে। গ্রামবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৩দিক থেকে নির্বিচারে গুলি ছুটে আসতে থাকে। আকস্মিক আক্রমণে হতবিহ্বল মানুষ জীবন বাঁচাতে গ্রামের পেছনের রাঙ্গুবিলের দিকে দৌড়াতে থাকেন। কেউ সাঁতরিয়ে, কেউবা বিলের দু’পাড় ঘেঁষে পালাতে চেষ্টা করেন। এভাবে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন ৩৫ গ্রামবাসী।
সেদিন গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা জনমানুষ শূন্য গ্রামটির প্রতিটি বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩-৪ ঘন্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে আসেন। তারা দেখতে পান গ্রামে বাড়ি-ঘর বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ভিটের পুড়া মাটির উপর শুধু পড় আছে পোড়া ছাঁই। জীবন বাঁচাতে তখনই তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। তবুও নাড়ীর টানে কেউ গ্রামেই পড়ে ছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই।
এদিকে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলে মিলে শহীদের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাটের পাশেই সেই গণকবর অবস্থা। কিন্তু গণকবর সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক না করায় ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে।
এলাকাবাসীর দাবী জগৎপুরে বধ্যভুমিকে রাষ্ট্রীয় ভাবে হেফাজত করা হউক।
Leave a Reply