মোঃ লিমন গাজী
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই চলত ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ এমভি অভিযান-১০। বিষয়টি বরগুনার বিআইডব্লিউটি-এর নৌ-বন্দর কর্মকর্তা জানলেও কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকরে এর আগেও দুর্ঘটনা কবলিত হয় লঞ্চটি। সে যাত্রায় অর্ধ সহস্রাধিক যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেলেও যাত্রীদের অভিযোগ আমলেই নেয়া হয়নি।
প্রায় প্রতিদিন বরগুনার উদ্দেশ্যে ঢাকার সদরঘাট ত্যাগ করে দুইটি লঞ্চ। যার একটি ছাড়ে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আর অপরটি সন্ধ্যা ছয়টায়। বরগুনা থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বরগুনা কে আগে পৌঁছাতে পারে তা নিয়ে লঞ্চের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা।
জানা যায়, গত ১২ আগস্ট ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এমনই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা অংশ নেয় এমভি অভিযান-১০। পরে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর একটি চরে উঠে কাত হয়ে পড়ে যাবার উপক্রম হয় লঞ্চটির। সে যাত্রায় ভাগ্য সহায় ছিল বলে প্রাণে রক্ষা পান লঞ্চের অর্ধ সহস্রাধিক যাত্রী। গত ২৩ ডিসেম্বরও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই স্বভাবিকে থেকে অনেক বেশি গতিতে চলছিল লঞ্চটি। এর ফলে ইঞ্চিন বিস্ফোরিত হয়ে ঘটে নৌ পথে দেশের ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
২৩ তারিখ দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আশিক, সাদিক, সাব্বিরসহ কয়েকজন যাত্রী জানান- বুড়িগঙ্গা নদী পারি দেয়ার পর পরই অস্বাভিকভাবে গতি বেড়ে যায় লঞ্চটির। এতে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ফ্লোট গরম হয়ে যায় এবং ইঞ্জিনে বিকট শব্দ হতে থাকে। বিষয়টি চালক ও অন্যান্য স্টাফদের জানালেও তারা কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। এছাড়াও মাঝ নদীতে গতি বাড়ি পাল্লায় লিপ্ত হয় এই রুটের লঞ্চগুলো।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকমাস আগে মাঝ নদীতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গতিতে চলায় ঝালকাঠির একটি চরে উঠে কাত হয়ে যায় এমভি অভিযান ১০। এতে কোন হতাহত না হলেও কয়েকশ যাত্রী পড়ে ভোগান্তিতে। লঞ্চের এমন বেহাপনা চলতে থাকলে ভবিষ্যতেও দূর্ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে।
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটির কথা আগেই জানতেন বরগুনার নৌ বন্দর কর্মকর্তা। এছাড়াও লঞ্চটির অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভিযোগও আমলে নেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বরগুনা নৌবন্দর কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিলো। তবে এসব দেখার দায়িত্ব হচ্ছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের। তাদের ছাড়পত্র ছাড়া নদীতে নৌজান নামানো যায়না। ত্রুটিযুক্ত ইঞ্জিন তারা কিভাবে পারমিশন দিল সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
কতৃপক্ষের অবহেলা, গাফিলতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার জন্যই এমন দুর্ঘটনার অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই এর দায় কতৃপক্ষ এড়াতে পারে না বলেও দাবি তাদের।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য তারিক বিন আনসারী সুমন বলেন, এই দুর্ঘটনার দায় কোনভাবেই কতৃপক্ষ এড়াতে পারবেনা। তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় এবং গাফিলতিতে এসব দূর্ঘটনা হচ্ছে। তাদের যদি এখনও টনক না নড়ে তাহলে তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। আমরা এসব খামখেয়ালিপনা বন্ধের দাবি জানাই।
যাত্রীদের অভিযোগ অগ্রাহ্য করা গুরুতর অন্যায়। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস স্থানীয় সংসদ সদস্যের।
এবিষয়ে বরগুনা ১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, কতৃপক্ষের গাফলতিতে এসব প্রানহানি ঘটেছে। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবগত করবো। শিগ্রই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, এদের মধ্যে ৩৭ জনই বরগুনার। এছাড়াও আহত রয়েছেন শতাধিক যাত্রী, নিখোঁজও আছেন অনেকে।