মোঃ লিমন গাজী
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এক অন্যতম সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। তারই ধারাবাহিকতায় নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে বরগুনা জেলা রেডক্রিসেন্টের যুব রেডক্রিসেন্ট। এদের রয়েছে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট এক কার্যনির্বাহী কমিটি সহ প্রতিটি উপজেলায় ৫০-৬০ জন করে সাধারণ সদস্য। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সবার আগে ছুটে যান তারা।
বরগুনা জেলা বর্তমান যুব রেডক্রিসেন্ট এর প্রধান মেহেদী হাসান মুসা বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট সকল প্রকার দূর্যোগে কাজ করে, যুব রেড ক্রিসেন্ট বরগুনা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক দূর্যোগ, অগ্নিকান্ড সহ প্রায় সকল প্রকার দূর্ঘটনায় কাজ করে।
করোনার শুরু থেকে প্রচার প্রচারণাসহ জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শুরু থেকে কাজ করে বরগুনা জেলা প্রশাসনকে সর্বদা সহোযোগিতায় করে যাচ্ছেন বরগুনা জেলা রেডক্রিসেন্টের যুব রেডক্রিসেন্ট।
গত ২৩ তারিখ অভিযান ১০ লঞ্চ দূর্ঘটনায় মৃত ব্যাক্তিতের লাশ ২৪ তারিখ রাতে বরগুনা নিয়ে আসা হয়। এর পর ডেডবডি গোসল করানো, প্যাকেট করা, কফিন বক্সে ভরা সহ দাফনকার্য করেন বরগুনা জেলার যুব রেডক্রিসেন্ট। এ কাজে ১৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরলসভাবে কাজ করেন। এছাড়াও স্বজন হারানো ব্যক্তিদের জন্য তথ্য ও অনুসন্ধান ডেস্ক ছিলো তাদের।
সদ্য দুর্ঘটনার স্বীকার ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ দুর্ঘটনার পরে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহন করে কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ঝালকাঠি রেডক্রিসেন্ট ইউনিট।
ঝালকাঠির যুব প্রধান জনাব মশিউর রহমান শাহিন এর নেতৃত্বে উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজে যোগ দেয় একদল দক্ষ সেচ্ছাসেবক। প্রশাসনের সাথে যুব রেডক্রিসেন্ট ঝালকাঠি ইউনিট সকাল-সন্ধ্যা সফলভাবে উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম থেকে সব ধরনের তথ্য প্রদান করে ভিকটিমদের স্বজন ও নিকটাত্নীয়দের সহায়তা করেন তারা।
এছাড়াও দুর্ঘটনা কবলিত আহতদের ঝালকাঠি থেকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হলে বরিশাল রেডক্রিসেন্ট এর যুব প্রধান জনাব আতিক শুভ এর নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবক রোগীদের সেবা প্রদান ও ভিকটিমদের স্বজন ও নিকটাত্নীয়দের তথ্য প্রদান করেন।
এর পর বরিশাল থেকে বেওয়ারিশ লাশগুলো বরগুনায় নিয়ে আসা হলে যুব প্রধান জনাব মেহেদী হাসান মুসা এর নেতৃত্বে প্রস্তুত ছিল ডেড-বডি ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষিত একদল তরুণ যুব সেচ্ছাসেবক। বরগুনায় মৃতদেহ পৌছাঁনোর শুরু থেকে গতকাল জানাজা শেষ করে বরগুনা পোটকাখালি গণকবরে দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক একযোগে কাজ করেন।
কোন পারিশ্রমিক ছাড়া শক্ত মনোবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা মানব সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করে সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট এর পরিচিতিঃ
৩১ মার্চ, ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আদেশে ১৯৭৩ (পিও-২৬) জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’ স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর, ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রেডক্রসের ২২তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তেহরানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ২০ ডিসেম্বর যখন দুই পাকিস্তান এক ছিল তখন থেকে এর কার্যক্রম এই অঞ্চলে শুরু হয়।