হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি:
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগগুলো প্রতিরোধ শরীরচর্চা, শারিরীক পরিশ্রম এবং তাজা-শাকসবজি গ্রহণ জরুরি। শরীরচর্চা পরিবেশ নিশ্চিত, তাজা-শাকসবজির ফলমূলের যোগান নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিদ্যমান আইনে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। খবর বাপসনিউজ।গত ২৯ জুলাই ২০২১ সোমবার সকাল ১১টায় সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) এবং আর্ক ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে ‘অসংক্রামকরোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে জনস্বাস্থ্য নীতি বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মেয়র এলায়েন্স ফর হেলদি সিটি এর আহবায়ক গাজী কামরুল হুদা সেলিম। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাইকা এর এনসিডি বিষয়ক পরামর্শক ডঃ বরেন্দ্রনাথ মন্ডল, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের হেলাল আহমেদ, সিয়াম এর নির্বাহী পরিচালক এড. মাসুম বিল্লাহ, সুশাষন ফাউন্ডেশনের কনক মজিবুদৌল্লাহ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র পরিচালক গাউস পিয়ারী, ব্যারিষ্টার নিশাদ মাহমদু এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সিএলপিএ এবং আর্ক ফাউন্ডেশনে-র তাজা শাক-সবজি গ্রহণ সংক্রান্ত গবেষনায় দেখা গেছে ১১টি মন্ত্রণালয়ের ৩১টি আইনে ও নীতিমালায় তাজা-শাকসবজি যোগানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৮৯.৬ শতাংশ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ৫ ধরনের ফল ও সবজি গ্রহণ করে না। অথচ প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। কায়িক পরিশ্রমের সুবিধা সংক্রান্ত ২৫ টি জেলায় পরিচালিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৭টি জেলায় কোন ব্যায়ামাগার বা জিমের ব্যবস্থা নেই। ২২টি জেলার মধ্যে মাত্র ২টি জেলার আওতাধিন সাঁতার কাটার জন্য পুলের ব্যবস্থা আছে। ৫০১ টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সরকারী বিদ্যালয়ে কোন নিজস্ব মাঠ নেই। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বাজেট বরাদ্ধের ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোতে নিরাপদ খাদ্যাভাস এর পাশাপাশি শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রমের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যা নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাজেট বরাদ্ধ এবং আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের অসংক্রামক রোগজিনত মৃত্যু ৩০% কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকারকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার আইনে কায়িক পরিশ্রম ও শরীর চর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে বিষয়াদি নিশ্চিতে আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ইউনিয়নের খাস জমি খেলার জন্য সংরক্ষণ ও বরাদ্দ রাখা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা।
বক্তারা বলেন, প্রতিটি এলাকায় জনসংখ্যা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান/পদ্ধতি নির্ধারনে গবেষণা পরিচালনা করে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কি না তা নিয়মিত মনিটরিং করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বা অষ্টম শ্রেনীতে পাশের ক্ষেত্রে সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক করা। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের উপর অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর আরোপ এবং এ সকল করের অর্থে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠণ করা, যা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্থায়িত্বশীল অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে রোগ প্রতিরোধে আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কোভিট ১৯ আমাদেরকে এই বার্তাই দিচ্ছে। অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্য খরচ ও মৃত্যু কমবে এবং সর্বপরি দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। পরিশেষে তিনি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিত করনে স্থানীয় সরকার কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ের আহ্বান জানান।