1. [email protected] : দৈনিক বিজয়ের বানী : দৈনিক বিজয়ের বানী
  2. [email protected] : Hasan :
  3. [email protected] : dev : dev
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে ! - dainikbijoyerbani.com
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন
ad

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে !

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১
  • ৬১৮ Time View

সামাউন আলী, সিংড়া প্রতিনিধিঃ

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। যারা টেবিলের মাঝখানে হারিকেন রেখে চার পার্শে বসে হারিকেনের মিট মিটি আলোতে পড়া-লেখা করেছেন তারা আজ অনেকেই উচ্চপদস্থ সরকরি কর্মকর্তা, পথিকের পথের সাথী হারিকেন আজ শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মানুষের নিত্যসঙ্গী ছিলো যে হারিকেন যা দিয়ে গ্রাম বাংলার রাতের আঁধার দূরীভূত হতো তা আজ টর্চ বা গ্যাস লাইট দিয়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই কেরোসিন তেলের হারিকেন জ্বালিয়ে রাতের জমিতে হাল চাষ করার দৃশ্য দেখা যেতো কৃষকের মাঝে। হারিকেন দেখতে কেমন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম ছেলে মেযেদেরকে জাদুঘরে যেতে হবে।

হারিকেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামের আলোর চাহিদা মিটানো বা অন্ধকার দূর কারার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন সেই হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে, বাঙ্গালীর জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে এক সময় গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন। যার অন্যতম জ্বালানি উপাদান ছিল কেরোসিন। তখনকার সময় এসব জ্বালিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাতে বিয়ে,যাত্রাগান, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ির উঠানে বা ঘরের বারান্দায় ছাত্র-ছাত্রীরা বসে একসাথে পড়াশোনা করতো।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে সেসব। সেই হারিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের রাতের সঙ্গী হারিকেন কয়েক দশকের বেড়ে ওঠা মানুষের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে হারিকেন। সন্ধ্যা হলেই বাংলার ঘরে ঘরে জলে উঠতো হারিকেন। তার আগে গৃহিণীরা এর চিমনি খুলে পরিষ্কার করে রাখতেন। এতে আলো একটু ভালো পাওয়া যেতো। আজকের প্রজন্মের অনেকেই চিনতেই পারবে না এই প্রযুক্তিটি।

হারিকেন কেবল ঘরে আলো দেওয়ার কাজেই ব্যবহার করা হতো না। অন্ধকারে কোথাও যাওয়া আসার জন্যও হাতে হারিকেন ঝুলিয়ে
নিতেন। আলোও হতো বেশ। যদিও এখনকার সাদা আলোর মতো হতো না। কিন্তু তখন তো এই আলোই ছিল যথেষ্ট।

নাটোরের সিংড়াতে এখন আগের মতো আর হারিকেনের ব্যবহার দেখা যায় না। দোকানগুলোতেও পাওয়া যায় না হারিকেন। মাঝের মধ্যে দু একটা ভ্যান গাড়ীতে হারিকেন চোখে পরে।

ভাগনাগারকান্দী গ্রামের কামরুন নাহার স্মৃতিচারন করে বলেন,খুব মনে পড়ে সেদিনের কথা,যখন ছোট ছিলাম ,ইলেক্ট্রিসিটি ছিলো না ঘরে। দুই ভাইবোন একটি হারিকেন নিয়ে সাঁজ বেলাতে পড়তে বসতাম। তারপর ঝগড়া করতাম। আমি বলতাম হারিকেনের আলো ছোট ভাই বেশি পাচ্ছে আর ছোট ভাই বলতো আমি বেশি পাচ্ছি। আর মা রান্নাঘর থেকে শাসনের স্বরে দুজনকে বুঝানোর চেষ্টা করত। আর তাও না হলে মা রান্নাঘর থেকে তার রান্নার কুপি এনে আমাকে দিতো। আর একটু ঝড়,বৃষ্টি হলে হারিকেন আর কুপির আলোয় নিভু নিভু করতো তখন পড়া থেকে বেঁচে যেতাম। খুব মজা লাগতো। আবার খাবার সময় বাবা মা ভাই বোন সবাই একসঙ্গে খেতাম হারিকেনের আলোতে। আর ঘুমানোর সময় হারিকেন হালকা জ্বালিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম। এখন এগুলো কথা মনে পড়লে খুব মজা লাগে কতো না সুন্দর সময় ছিল।

গোল ই আফরোজ সরকারি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন,এক সময় বিদ্যুৎ ছিলোনা কিংবা লোডশেডিং হলে হারিকেন বা বাতি ছিলো প্রধান আলোক বাহন।
হাইস্কুলে থাকতে হারিকেনের আলোয় অনেক পড়াশোনা করেছি। এমনকি ২০১৩ সালে হারিকেনের আলোতে পড়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, হারিকেনের আলো দিয়েই খাওয়া দাওয়া হতো রাতে এছাড়াও ভ্যান গাড়ি,নৌকা চালতে দেখেছি, হারিকেন জ্বালিয়ে পথ চলতে হয়েছে।

ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা বলেন,নিতান্তই প্রত্যন্ত এলাকার
মানুষ অথবা নৌকায় ব্যবহারের জন্য হারিকেন কিনে নিয়ে যায়। দুই ধরনের হারিকেন রয়েছে দোকানে। আকার ভেদে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম। একসময় হারিকেনের রমরমা ব্যবসা ছিল। এখন মাসের পর মাস পার হলে একটা হারিকেন ও বিক্রি হয় না।

তরুন লেখক সুমন আলী বলেন,হারিকেন! আতকে উঠার কিছু নেই,ভয় পাবারো কিছু নেই। এটা সাইক্লোন বা ঝড়,নয়, এটা হারিকেন। তবে এই হারিকেন আমাদের অন্যতম আলোক বর্তিকার একটি নিদর্শন। তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের এই প্রযুক্তি দেখার জন্য জাদুঘরে যেতে হবে।

নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৩ বর্ষের ছাত্র আশিক আলী বলেন, হারিকেন গ্রাম বাংলার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তি ছিলো কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা আর চোখে পরেনা। আমরা যখন নানার বাড়িতে সব ভাই বোন এক সাথে মিলিত হতাম তখন হারিকেনের আগুন জ্বালানো,শলতে পরানো ও হারিকেন সেট করা এসব বেপার নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো যা শুধু এখন স্মতিচারন।

এ বিষয়ে পরিবেশ কর্মী, এস এম রাজু আহমেদ বলেন,হারিকেনের মাঝে মিশে আছে শৈশবের স্মৃতি। যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল হাতেগোনা কয়েকজন ধনী শ্রেণীর মানুষের বাসায়। তখন আমাদের পড়াশোনার জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন। হারিকেনকে দেখলেই শৈশবের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়। আরো একটা কথা মনে পড়ে যায়,একদিন বিকেলে মা আমাকে ১০ টাকা দিয়ে হারিকেনের কেরোসিন তেল কিনতে দিয়েছিল রাতে হারিকেন জ্বালানোর জন্য কিন্তু আমি খেলাধুলা করার নেশায় তেলটা না কিনে খেলাধুলা করে এসে দোকানে গিয়ে দেখি কেরোসিন তেল দোকানে নেই। সেদিন কতজনের বাসায় ঘুরে ছিলাম,একটু তেল ধার করার জন্য,অবশেষে এক বাড়িতে পেয়েছিলাম যা দিয়ে হারিকেনটি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম।

এক সময় হারিকেন জালিয়ে রাস্তার পাশে দোকান করার দৃশ্য ছিল নিয়মিত। এখন এলইডি বাল্বের আলোয় হারিকেন ব্যবহার উঠে গেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এক সময়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ।

ad

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ad
ad
© All rights reserved 2022
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সীমান্ত আইটি