উচ্চ রক্তচাপ বা হাইব্লাড প্রেসার কি? লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়
প্রেসার বেড়ে মাথা ঘুরলে বা ঘাড়ে ব্যথা শুরু হল, তখন এলাকার ফার্মেসির দোকান থেকে প্রেসার মাপিয়ে আর কয়েক দিন ওষুধ খেয়ে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনা হল। প্রেসার যখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, তখন আর খামকা ওষুধ খাওয়ার দরকার কী?তাই বন্ধ করে দেন প্রেসারের ওষুধ সেবন করা। রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ে ধারণাটা বহু বাড়িতেই অনেকটা এই রকম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণগুলো হচ্ছে:
১) বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তচাপ সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা জানাচ্ছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন। আর পঞ্চাশের কোঠায় বয়স হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনে ৫ জন। বয়স ৭০ বা তার বেশি হলে প্রতি দুই জনের মধ্যে এক জনের উচ্চ রক্তচাপ থাকবে।
২) খাবারে বেশি লবণ খাওয়ার জন্য প্রেসার বাড়তে পারে।
৩) ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসার বৃদ্ধি পায়।
৪) শারীরিক পরিশ্রম না করে বসে বসে থাকলে ওজন বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপ।
৫) মানসিক চাপ বা উত্তেজনা বাড়লে অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে নরঅ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার বৃদ্ধির লক্ষণ:
একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না।তবে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া,অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মত লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার নিয়ন্ত্রণের উপায়:
রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে প্রথমত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন বাড়লে হার্ট বেশি পাম্প করবে। ফলে রক্তচাপ বাড়বে। তাই উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুতরাং খাবার এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের জন্য দরকার ড্যাশ ডায়েট অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ খাবার। রোজকার খাবারে থাকবে রকমারি ফল ও প্রচুর শাকসব্জি। কারণ, এগুলোর মধ্যে থাকে পটাশিয়াম ও প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগলে অ্যানিমাল প্রোটিন কম খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। কারণ পানি হল ডাইইউরেটিক। পানি শরীরের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। পানি শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক পদর্থগুলোকে বের করে দেয়। এগুলো বেরিয়ে গেলে শরীরে রক্তের চাপ কমে।
রক্তচাপ বেশি হলে কাঁচা লবন খাবার সম্পূর্ণ নিষেধ। লবণনের সোডিয়াম ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। দিনে ২-৩ (ছোট চামচের হাফ চামচ) গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। বাদ দিতে হবে প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড, টিন ফুড, প্যাকেট ফুড, রেডি টু ইট ফুড, আচার, চিপস ইত্যাদি। কারণ এগুলোতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে লবন মেশানো থাকে।
সর্বোপরি উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার আয়ত্তে আনতে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। কোনও ভাবেই ওষুধ খেতে ভুলবেন না। উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও সেটি বজায় রাখতে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। নাহলে আবার বেড়ে যাবে।
সমস্যা হোক বা না হোক, কয়েক মাস পর পর অবশ্যই ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করাতে হবে। কাঁচা লবণ খাবেন না। নোনতা খাবার একেবারেই নয়।স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার কমিয়ে দিন। মদ্যপান, ধূমপান করবেন না।শুয়ে বসে দিন কাটাবেন না। পরিশ্রম করুন, এতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখুন এবং যে কোন ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
লেখক: ডা. মোঃ সাইফুল আলম। এম.ডি. (রুদেন ইউনিভার্সিটি) মস্কো,রাশিয়া।