বায়জিদ হোসেন, মোংলাঃ
সন্দেহবশত এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে রাইফেল ভেঙ্গে ও গুলি খুইয়ে ফেলার ঘটনার দায় এড়াতেই বনবিভাগ নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয়রা। অস্ত্র ভাঙ্গা ও গুলি খোয়া যাওয়ার ঘটনার দায়ভার নিজেদের ঘাড়ে না নিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর চাপাতেই বনবিভাগ নানা অপতৎপরতা ও কুটকৌশল অবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অসংখ্য গ্রামবাসী। সরেজমিনে জানা যায়, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) জিউধরা ষ্টেশনের আওতাধীন বাগেরহাটের মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তের/বডার্রের জিউধরা গ্রামের সরোয়ারের বাড়ীতে হরিণের মাংস রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে ওই বাড়ীর উদ্দেশ্যে অভিযানে যান বনবিভাগের জিউধরা ও আমুরবুনিয়া ক্যাম্পের কর্মকতার্-কর্মচারীরা। কিন্তু অভিযানকারীরা ওই বাড়ীতে ঢুকতেই পাশের বাড়ীর মালিক দেলোয়ার তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার (৪২) তাদেরকে দেখে ভয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন ধাওয়া করে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্দেহবশত মুন্নাকে ধরে তাদের ব্যবহৃত রাইফেল দিয়ে বেদম মারপিট করেন। এতে তাদের রাইফেলটি ভেঙ্গে দুই টুকরা হয়ে কয়েক রাউন্ড গুলিও হারিয়ে যায়। এ সময় মুন্নার ডাক-চিৎকারে তার আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এলে অভিযানকারীরা তখন ভীতি সৃষ্টির জন্য তাদেরকে লক্ষ্য করে ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েন। ওই সময় গুলির শব্দে চারপাশের লোকজন মুহুর্তের মধ্যেই ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। ঘটনাস্থল থেকে বিবস্ত্র ও অনেকটা অচেতন অবস্থায় মুন্নাকে বিলের কাঁদা-মাটির মধ্যথেকে উদ্ধার করেন গ্রামবাসী। সন্দেহবশত মুন্নাকে অহেতুক মারধর করে আহত ও বিবস্ত্র করে ফেলার ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী বনবিভাগের ওই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখেন। অবরুদ্ধ করে রেখেই গ্রামবাসী বনবিভাগের উর্ধতন কর্মকতার্দেরকে ফোনে বিষয়টির নালিশ জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচারের দাবী করেন। পরে বনবিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ফোনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধদেরকে উদ্ধার করেন।
সন্দেহবশত বনবিভাগের সদস্যদের মারপিটের শিকার মুন্নার ছোট ভাই রিয়াদ তালুকদার (৩৮) বলেন, আমার ভাই মুন্না ঢাকায় থাকেন। কয়েকদিন হলো বাড়ীতে বেড়াতে এসেছেন। তার নামে ঢাকায় একটি মামলা আছে। বুধবার ভোরে আমাদের বাড়ীর পাশে ফরেস্টারদের দেখে সে ভেবেছে ডিবি কিংবা প্রশাসনের লোকজন এসেছে। তাই ভয়ে দৌঁড় দেয়। তখন ফরেস্টাররা তাকে ধাওয়া করে ধরে কোন কিছু না শুনেই মারপিট করতে থাকেন। ফরেস্টার জাহিদুল ইসলামের কাছে থাকা রাইফেল দিয়ে তাকে পিটানোর এক পযার্য়ে সেটি ভেঙ্গে যায়। পরে খবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে গিয়ে আমার ভাই মুন্নাকে মারধরের বিষয়টি তাদের কাছে জানতে চাইলে ফরেস্টাররা তখন ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং আমাকেও গুলি করার ভয় দেখায়। তারা আমার ভাইকে মেরে রাইফেল ভেঙ্গে সেই দায় আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। ফরেস্টাররা এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে রাইফেল ভাঙ্গার মামলা দেয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। জিউধরা বাজারের দোকানী মো: রবিউল বলেন, ফরেস্টাররা ফজরের সময়ে এসে যে বাড়ীতে অভিযান সেখান না গিয়ে পাশের আরেক বাড়ীর লোককে ধরে মারধর করেছে। এটা তো আমরা ভালভাবে দেখতে পারিনা, ফরেস্টারদের এমন কাজ করাটা উচিৎ হয়নি। ফরেস্টাররা মারধর করে রাইফেল ভেঙ্গেছে, এখন শুনছি গ্রামের মানুষের নামে রাইফেল ভাঙ্গার মামলা দিবে। এর আগেওএমন একটা ঘটনা ঘটনায় ফরেস্টাররা, সে মামলায়ও পরে গ্রামবাসীর জয় হয়েছে। জিউধারা গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, ফরেস্টাররা ভুল করে মুন্নাকে মেরেছে বলে ঘটনাস্থলে স্বীকারও করেছেন। তখন তারা ঘটনার মিমাংসার কথা বললেও এখন শুনছি উল্টো মামলা করবেন। আমরা মুলত এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
মুন্নার মা পারুল বেগম বলেন, ফরেস্টাররা আমার ছেলেকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়ে উলঙ্গ করে ফেলে। খবর পেয়ে আমার আরেক ছেলে তাদের কাছে জিজ্ঞাস করতে গেলে তারা বলে তোকেও গুলি দিবো, এই বলে তারা ফায়ার করে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। একই গ্রামের বাসিন্দা সোনিয়া বেগম বলেন, আমরা গ্যানজ্যামের শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি মুন্না নামক এক লোককে ফরেস্টাররা মারধর করছে। তখন ফরেস্টাররা রাইফেল দিয়ে তাকে পিটিয়ে রাইফেলটি ভেঙ্গে ফেলে। পরে তাকে মাটিতে পাড়িয়ে ধরে শরীরের কাপড়চোপড় খুলে ফেলে। এ সময় আরো লোকজন ছুটে আসতে থাকলে ফরেস্টাররা ৬টি ফাঁকা গুলিও করে। এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে ওই সকল ফরেস্টারদের বিরুদ্ধে জিউধরা গ্রামের ঘটনাস্থলে শুক্রবার দুপুরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনার বিষয়ে জিউধরা ষ্টেশন কর্মকতার্ মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জিউধরা গ্রামের সরোয়ারের বাড়ীতে হরিণে মাংস রয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে আমরা সেখানে অভিযানে যাই। কিন্তু ওই বাড়ীটিতে ঢুকার সময় পাশের বাড়ী থেকে মুন্না নামক এক লোক আমাদের দেখে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সন্দেহবশত আমরা তাকে ধাওয়া করে ধরি। এ সময় মুন্নার বাড়ীর ও আশপাশের লোকজন আমাদের উপর আক্রমণ করেন। তাদের আক্রমণে আমাদের একটি চাইনিজ রাইফেল ভেঙ্গে দুই টুকরা হয়ে যায়, খোয়া যায় ৫ রাউন্ড গুলি এবং তিনজন ষ্টাফ আহত হন। এ ঘটনায় ওই গ্রামের আক্রমণকারীদের নামে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে শুক্রবার বিকেলে জানিয়েছেন এ বন কর্মকতার্।