সেলিম আহমেদ,
কুলাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি :
রওসন হাবিব চৌধুরী একজন সফল নারী উদ্যোক্তার নাম। নারীদের উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছেন রওসন হাবিব। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার কমতি নেই তার।নানা প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য আগ্রহে কিছু একটা করবেন এ চেষ্টা থেকে পিছপা হননি তিনি।
কৃষি খামার করার শখ ছিল তার ছোট বেলা থেকে। গত শ্রক্রবার ১২ নভেম্বর দুপুরে সরেজমিন রওসনের বাড়িতে গেলে টেলিভিশন ও ইউটিউবে একজন নারীর মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প শুনে প্রথমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানালেন এই প্রতিবেদককে । ২০১৫ সালে যুব উন্নয়ন অফিস কুলাউড়া থেকে হাঁস মুরগী পালন ও গবাদিপশু, মাছ চাষ, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেডে ৭৩ তম প্রশিক্ষণ ব্যাচে অংশ নিয়ে যুব উন্নয়ন অফিস কুলাউড়া থেকে ৫০ হাজার টাকার ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে শখের বসে ব্রয়লার মুরগি লালন পালনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ কাজে পরিবারের সহযোগিতা নেন তিনি। প্রথম দিকে খরচ বাদে এখানে লাভ আসে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকার অধিক। এতে আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ২০১৮ সালে পূর্বের ঋণ পরিশোধ করে আরো ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। ধীরে ধীরে রওসন এর পোল্ট্রী খামারে লাভের মুখ দেখা দিলে পরিবারের আর্থিক সহযোগিতায় নিজ বাড়িতে ১৯ শতাংশ জমির ওপর ১৪ লক্ষ টাকার মূলধন নিয়ে গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার, কবুতরের খামার, মৎস্য চাষ ও ফলদ বাগান, গরুর খামার। বর্তমানে মুরগির খামারে রয়েছে শতাধিক সোনালি জাতের মুরগি, ব্রয়লার মুরগি। রয়েছে পুকুর ভরা নানা জাতে মাছ , গোয়াল ভরা গরুর বিদেশী জাতের গরুর খামার এবং ৩০০ খাকি খ্যাম্বল জাতের হাঁসের খামার।বাড়িতে লাগিয়েছেন সুপারী গাছ সহ নানা জাতের ফলদ বৃক্ষ। তাছাড়া প্রতিবছর সরিষা চাষ করে নিজের পরিবারের তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরিষা তেল বিক্রি করেও হচ্ছেন লাভবান। এখন রওসন হাবিব চৌধুরীর নিজস্ব পুঁজির ১৪ লাখ টাকা হলেও ব্যবসায় সফলতা দেখে এলাকায় অনেক নারীরা হাঁস মুরগী ও গবাদিপশুর খামার গড়ে তুলেছেন।
সব গুলো থেকে তার বাৎসরিক আয় আসে প্রায় চার লাখ টাকার অধিক। অদম্য সাহসী রওসন হাবিব চৌধুরীর খামারের আয় থেকে নিজের পরিবারের সকল খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি টাকাও ব্যাংকে রাখতে পারছেন। ছেলের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন খামারের আয় থেকে। তার এ কাজে স্বামী হাবিবুর রহমান চৌধুরী সহযোগিতা করে থাকেন। প্রতিবেশীরা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন সফলতার গল্প শোনার জন্য। কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের নন্দনগর গ্রামের রওসন হাবিব চৌধুরী ২০১৬ সালে কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা একজন নারী হলেও সফলতার জন্য সমাজে এখন স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দ রওসন হাবিবের চোখ মুখে। নিজে নারী হওয়ার কারণে কাজের সুবিধার্থে খামারে আরও কয়েকজন নারী কর্মী রয়েছে সার্বক্ষণিক। রোগবালাই সম্পর্কে প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে মুরগির যে কোন ধরণের সমস্যা হলে নিজেই তার চিকিৎসা করতে পারেন বলে জানান রওসন হাবিব চৌধুরী। এ সফলতা দেখে প্রতিবেশী নারীরাও উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি খামার গড়ে তুলেছেন। পাশের খামারী কয়েকজন নারী বলেন, রওসন আমাদের সামনে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁকে দেখেই মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানান তারা।নারী উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খামারী সৃষ্টি করা মাছ ও মুরগি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন সফল আত্মকর্মী রওসন হাবিব। অদম্য সাহসী ও সফল আত্মকর্মী ক্ষুদ্র ঋণে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি কুলাউড়া যুব উন্নয়ন অফিসের সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, আমার মতো অনেক নারীরা কুলাউড়া যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সফলতা লাভ করেছেন।কুলাউড়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল মতলিব দৈনিক বিজয়ের বানী কে জানান, বরমচালের রওসনের মত অনেক নারী কুলাউড়া যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এতে বেকারত্বের হার কমছে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারীদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।