হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ
গত ১৬ই ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ বাংলাদেশী বুড্ডিস্টস (WFBB) এর উদ্যেগে এবং সংগঠনের আহবায়ক ডঃ বসুমিত্র বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের বিজয় দিবস ৫০বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ঢাকা থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। সাবেক মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্বকে আজ যে গ্লোবাল ভিলেজ বলা হয়, আমি মনে করি, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ বাংলাদেশী বুড্ডিষ্টস, বৌদ্ধদের জন্য বিশ্বময় একটি বৌদ্ধ পল্লী। বাংলাদেশী বৌদ্ধদের এই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েও ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশের বৌদ্ধের মাঝে একটি সমন্বয় সাধন করে, বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জেনে এবং সম্ভাবনা সমূহ আদান প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছে, আত্মদান করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছে। সংখ্যায় নগন্য হলেও রাজনীতিতে বৌদ্ধরা সব সময় সম্পৃক্ত ছিল, আছে এবং থাকবেন। তিনি বৌদ্ধদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, রাজনীতি ছাড়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া যায় না এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব হয় না। তিনি বলেন মহামান্য সংঘ নায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির স্বাধীনতা সংগ্রামে কৌশল হিসাবে বৌদ্ধদের চায়না বুড্ডিষ্ট পরিচিতি দিয়ে পাক বাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্রতিটি বৌদ্ধ গ্রামকে মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিশেষ করে বৃহ্ত্তর চট্রগ্রাম এবং কুমিল্লা অঞ্চলে বৌদ্ধরা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিখে গেছেন, পালি -প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি, সংস্কৃত থেকে নয়। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সাথে বাংগালী বৌদ্ধদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বাংগালী বৌদ্ধরা এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অবদান রেখেছে। বৌদ্ধরা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সভাপতির বক্তব্যে ডঃ বসুমিত্র বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির পাকিস্তান সরকারের চাপে "পাকিস্তানের বৌদ্ধরা ভালো আছে" এই কথা না বলে, সময় ক্ষেপনের জন্য বৌদ্ধ গ্রামগুলো ঘুরে এসে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার অজুহাত দেখান। তিনি বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রাম পর্যবেক্ষন শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো চায়না বুড্ডিস্ট আইডি কার্ডে সিল মেরে বিতরণের কাজে অংশ গ্রহণ করি।
তিনি ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের উপর অত্যাচারের বর্ননা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। জেনেভার অরুন জ্যোতি বড়ুয়া, যুদ্ধে বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবিরের পাশাপাশি প্রয়াত সংঘরাজ জ্যোতিপাল মহাস্থবিরের অবদানকে তুলে ধরেন এবং দুজনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংগঠনের সদস্য সচিব সুহাস বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের এই আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, ভারতের হাদারাবাদ পিস্ ইনিশিয়েটিভস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশীষ বড়ুয়া এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অবসর প্রাপ্ত যুগ্ন সচিব আসিস বড়ুয়া। খবর বাপসনিউজ।সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, ভারতের সুমন বড়ুয়া, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রানা বড়ুয়া (জি স্যাং) ও অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সাউথ আফ্রিকা থেকে শৈবাল বড়ুয়া, জেনেভা থেকে সসীম বড়ুয়া, নরওয়ে থেকে লাবলু বড়ুয়া, স্পেইন থেকে উত্তম বড়ুয়া, প্যারিস থেকে উদয়ন বড়ুয়া, তাপস বড়ুয়া রিপন, দীপন বড়ুয়া, স্বদেশ বড়ুয়া, নিউ ইয়র্ক থেকে রণবীর বড়ুয়া, ইতালী থেকে সুমেধ তাপস বড়ুয়া, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে রানা বড়ুয়া, আয়ারল্যান্ড থেকে আর, কে, রূপেশ বড়ুয়া।