সৈয়দ মোঃ রাসেল, স্টাফ রিপোর্টার
হালকা বাতাসে বিস্তির্ন মাঠ জুড়ে কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ধানের শীষ দোলা খাচ্ছে। অনেক ক্ষেতের ধানের শীষ ইতিমধ্যে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে সোনালী হয়ে উঠছে। গন্ধে ভরে উঠেছে সমুদ্র উপক‚লীয় কলাপাড়ার গ্রামীণ জনপদ। আর কদিন পরেই শুরু হবে ধান কাটা, মাড়াই নতুন ধান ঘরে তোলার মহোৎসব। তাই প্রতিটি কৃষক পরিবারের কৃষকদের চোখে মুখে লেগে আছে সোনালী স্বপ্ন পূরনের ছাপ।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ জুড়ে সোনালী কাঁচা-পাকা ধানের ফসলি ক্ষেত যেন দিগন্ত ছুঁয়ে গেছে। কৃষকের ঘরে ঘরে শুরু হবে ধান তোলার পালা। তাই ধান কাটার জন্য নতুন কাস্তে তৈরী করতে দিয়েছে অনেকে। কেউ আবার পুরাতন কাস্তে মেরামত করাচ্ছে কামারবাড়িতে। কেউ কেউ নতুন ধান উঠানে রাখার জন্য বাড়ির আঙ্গিনা সুন্দর ভাবে পারিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন।কোন কোন এলাকায় লাঠিয়াল বাহিনীর আতঙ্কে পাঁকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা। রাত জেগে ধানক্ষেত পাহাড়া দিতে দেখা গেছে কৃষকদের। এজনপদে কৃষকের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের আনাগোনা আর তৎপরতায় ফসলের কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ায় দুটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ৪৯২.১২২ বর্গ কিলোমিটার। ৩৫৫০০ জন কৃষক পরিবার রয়েছে। এবছর ৩৩৭২৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে কৃষকরা। এর মধ্যে ২৫০১০ হেক্টর জমিতে উফশি ও ৮৭১৮ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। করোনার কারণে ধান কাটার জন্য দৈনিক ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এখন আবহাওয়া ও বাজারে ধানের দাম ভালো থাকেলেই পুষিয়ে যাবে এমনটাই বলেছেন কৃষকরা।
টিয়াখালী ইউনিয়নের কৃষক মো: বাচ্চু শিকদার এ প্রতিনিধিকে বলেন, অতি বৃষ্টির কারনে এ বছর চাষাবাদে কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। তিনি প্রায় তিন হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে। এতে তিনশ মন ধান পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছে। তবে ধান ভালোভাবে ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না লাঠিয়াল বাহিনীর আতঙ্কে আছি। বালিয়াতলী ইউনিয়নের কৃষক সজু ফকির বলেন, সে প্রায় দুইশ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে। এখন ক্ষেতের ধান পাকা শুরু করেছে। ক্ষেতে খুব একটা ভালো ফসল হয়নি। তারপরও দুইশ মন ধান পাবেন। তবে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় দু:চিন্তায় রয়েছে এই কৃষক। অপর এক কৃষক কুতুব উদ্দিন বলেন, সার-ঔষধ প্রয়োগ ও ক্ষেতের নিয়মিত পরিচর্যা করে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলে দুই-চার দিনের মধ্যেই ক্ষেতের ধান কাটবেন বলে তিনি জানান।
কলাপাড়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআরএম সাইফুল্লাহ গনমাধ্যমকে বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এ উপজেলায় কৃষকদের মাঝে ১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এটি দিয়ে ক্ষেতের ধান খুব অল্প সময়ে একই সাথে ধান কাটতে ও মাড়াই করা করতে পারবে কৃষকরা। এছাড়া উচ্চফলনশীল জাতের ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। আর মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নিবিড় তত্বাবধায়নে রেখেছে উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। এর ফলে আমন ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে আবহাওয়া অনুকলে থাকলে কৃষকরা কাঙ্খিত ফসল সুন্দর ভাবে কাটতে পারবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।