আমির উদ্দিন, কুলাউড়া প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হতদরিদ্রের স্বপ্নের উপহার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের অনেকটা সত্যতা পাওয়া গেছে। রড ছাড়া নিম্নমানের কাজের কারণে ধসে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘরে বসবাস বন্ধ করে দিতে চাইছে বলে জানান হতদরিদ্রদের মধ্যে অনেকে। হস্তান্তরের কিছুদিনের মাথায় দরজা জানালা ভেঙ্গে যাচ্ছে। উঠে যাচ্ছে মেঝের পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে পিলারসহ মুল ভবনে। প্রতি পিলারের শুধু উপরের অংশে ব্যবহার করা হয়েছে ২সুতা রডের এক দেড় ফুট লম্বা একটি মাত্র টুকরো দেয়া হয়নি কোন লিন্ডার।
ডিজাইনে উল্লেখ আছে, ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈঘ্য ও ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থ ঘরের ভিতরের দুই কক্ষ ৯ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈঘ্য এবং ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি প্রস্থ। রান্না ঘর, টয়লেটসহ ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ভীত মজবুত করতে ধরা হয়েছে মুল ভবনের চারিদিকে ৫৮ ফুট লেন্টিন। ডিজাইন মোতাবেক ঘর নির্মাণে ৬ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট, লোকাল বালু ২০০ ফুট এবং ভিটি বালু ৫০ ফুট প্রয়োজন। কিন্তু ঘর নির্মাণে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। এতে অল্প চাপেই ঘর ধসে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাজমিস্ত্রি। নিম্নমানের লোহার পাত দিয়ে দরজা ও জানালা নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ ইঞ্চি ফাউন্ডেশন দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে প্রকার ভেদে ৫-৬ ইঞ্চি।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর তৈরিতে কুলাউড়া ছাড়াও দেশব্যাপী উঠেছে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। প্রকল্পের বিভিন্ন ঘরের দেয়াল ও মেঝ দেবে যায় এবং পলেস্তারা খসে পড়ছে এবং ঘর বসবাসের পূর্বেই সামান্য বৃষ্টির কারণে কোথাও ধ্বসে পড়েছে, টিনের চালার বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি পড়ে, বিছানাপত্র সব ভিজে যায়, ঘরের ভিতরে পানি জমে, জানালা–দরজা সব এবং নিম্ম মানের পাত ব্যবহার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন এলাকার ভূক্তভোগিরা।
কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের স্থানীয় সঞ্জরপুর ও লালারচক গ্রামের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন যে তারা প্রত্যেকে ৩/৪/৫পিছ টিন, ২/৩/৪শ ইট ৪/৫/৬ব্যগ করে সিমেন্ট, প্রত্যেকে এবং দুই কেজি করে টিনের লোহা ও লাকড়ি নিজেরা কিনে এনে দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাদেরকে বলা হয়েছে এগুলা এনে না দিলে ঘরের কাজ কমপ্লিট হবেনা বা ঘর পাবেনা, এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে হুমকি ধ্বমকিও দেয়া হয়েছে।
যেহেতু তারা সবাই নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র লোক তাই অনেকে গাছ বিক্রি করে কেউ ধার করে কেউবা ভিক্ষা করে, একজন হতদরিদ্র মহিলা সুদ দিয়ে ২৫হাজার টাকা এনেও সে টাকা দিয়ে ৪টা সিমেন্ট ২কেজি লোহা ৪টা ঢেউটিন কিছু লাকড়ী ক্রয় করে এনে দিয়েছেন এবং কিছু টাকা দিয়ে রাস্তা থেকে মালামাল বাড়িতে এনেছে ও ইট নিজেরা ভেঙে কংক্রিট করে দিয়েছেন বলেও অশ্রু ভেজা মূখে অভিযোগ করেন।
তাদের দাবি এই ঘর গুলি তৈরিতে একবারে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বালু মহাল ও ছড়া থেকে পলি বালু নিয়ে বালুর সাথে সামান্য পরিমাণ সিমেন্ট মিশিয়ে নিম্নমানের ইট দিয়ে তৈরি দেয়াল, বন বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ছোট ছোট গাছ কেটে স্টীলের পাতের পরির্বতে কাঠ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে নিম্নমানের ঢেউটিন।
পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রতিটি ঘরে লোহার পাত ব্যবহার করা হলেও কুলাউড়া উপজেলায় ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের কাঠ। যার ফলে বালু, কাঠ, ইট ও ঢেউটিন থেকে প্রচুর পরিমান টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘরের কাজের জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে মোটিভেশনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে টাকা। বলা হয়েছে আপনাদের ঘরের ভিটার জন্য ১০-১২ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। এই টাকা দিয়ে ভিটে করা হলে আপনাদের ঘর ভেঙ্গে যাবে। চালের কাঠের জন্য ৭-৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে।
কেউ গাছ বিক্রি করে , কেউ গরু বিক্রি করে, কেউ জমি বিক্রি করে ঘর তৈরির কাজে তাদেরকে টাকা দিয়েছে। তবে ভোক্তভোগীদের দাবী যে কোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলোও ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে নিরাপদ আশ্রয়ের পরিবর্তে হয়ে উঠছে আতংকের। যেকোনো সময় ঘটতে পারে মৃত্যুর মত নানা দূর্ঘটনা।
ঘর তৈরিতে যেমন দুর্নীতি ও অনিয়ম তেমনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অধিকরণে রয়েছে অনেক অনিয়ম ও দূর্নীতি। শরীফপুর, হাজীপুর, কর্মধা এলাকায় যাদের চার বিঘা, ১০ বিঘা খাস জমি আছে তাদের জমিতে প্রথমে লাল পতাকা টানানো হয়েছিল কিন্তু অর্থের বিনিময়ে তাদের জমিতে ঘর তৈরি না করে বিধবা অসহায় মহিলা যাদের ১০-১৫ শতক জমি আছে তাদের জমিতে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কর্মধা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী সাবিরুন বেগমের একমাত্র বসবাসের জায়গাটুকু সরকারের নাম ব্যবহার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিধবা সাবিরুন অবিবাহিত দুটিকন্যা সন্তান নিয়ে হয়েছেন ভূমিহীন। তিনি কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট এ বিষয়ে তার দুরবস্থার কথা তুলে ধরলেও কোন প্রতিকার পাননি।
এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপকারভোগী জানিয়েছেন পঁচিশ-ত্রিশ লাখ টাকা মূল্যের ১০-১৫ শতক জমিতে চারটি-ছয়টি ঘর তৈরি করে উপকারভোগীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া গৃহ বরাদ্দের ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হাজীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ১নং খতিয়ানের সরকারী ভূমিতে শুধুমাত্র রণচাপ গ্রামের বাসিন্দা একে অন্যের আত্মীয় প্রবাসীদের মধ্যে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। গৃহ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ১। তারা মিয়া, ২। আব্দুল করিম, ৩। ছালাতুন বেগম তাদের নিজস্ব ভূমি আছে।
এ নিয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চোধুরীর সাথে মোটোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তেমন কোন অভিযোগ নাই তবে কিছু কিছু এলাকা হতে অভিযোগ আসলে তিনি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করেন এবং কিছু এলাকায় মেরামত প্রক্রিয়াধীন।
ইউএনও ফরহাদ আরো বলেন স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে বিরোধের জেরে