আসিফ জাহান
বিশেষ প্রতিনিধি কুলাউড়া
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভূলে জন্মের সময় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কুলাউড়া পৌর শহরের সেইফ ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে এ ঘটনাটি ঘটে। মারা যাওয়া নবজাতকটি উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের বাসিন্দা ছালেক মিয়া (২৭) ও গৃহিণী নাজমা বেগম (২২) দম্পতির সন্তান।
নবজাতকের পিতা ছালেক মিয়া জানান, সোমবার দুপুর ১ টার দিকে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমাকে সেইফ ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে নিয়ে আসি। বিকেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে চিকিৎসক জানান বাচ্চা সুস্থ আছে। সন্ধ্যায় আমার স্ত্রীকে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. সারওয়ার হোসাইন সিজার অস্ত্রপাচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।
ঘণ্টা খানেক পর অপারেশন থিয়েটার থেকে চিকিৎসক বের হয়ে জানান মৃত বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেছে। পরে নবজাতক সন্তানটির পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় ক্ষতের চিহ্ন দেখতে পাই। দিনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে বলা হলো বাচ্চা সুস্থ আর এখন কিভাবে বাচ্চা মারা গেলো, বিষয়টি চিকিৎসকের কাছে জানতে চাই। কিন্তু এ ব্যাপারে চিকিৎসক কোন সঠিক উত্তর দেন নি। আমার সুস্থ বাচ্চাটি চিকিৎসকের ভূলে অপারেশনের সময় মারা যায়।
এর সঠিক বিচার চাই আমি। অভিযোগ রয়েছে এই ক্লিনিকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই এমবিবিএস চিকিৎসক দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন অস্ত্রপাচার করা হয়। এছাড়া সেখানে সেবা নিতে আসা অনেক রোগী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্বারা নানাভাবে হুয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসক সারওয়ার হোসাইন বলেন, সিজারের সময় ওই মহিলার মৃত বাচ্চা হয়েছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশ হয়ে গেলে যা হবার হয়েছে এখন আমরা এ বিষয়ে কিছুই বলবো না। আমার কাছে শুনে লাভ নেই। সমাধান হওয়া বিষয়ে আমাকে নিয়ে টানাটানি করার কি দরকার। আপনি আপনার মতো করে প্রতিবেদন করেন। আমার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। বাচ্চা মৃত না সুস্থ হয়েছে সেটা লিখে দিন, অসুবিধা কি বলে ওই চিকিৎসক ফোন কেটে দেন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষন রায় বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে আসলে হাসপাতালে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কিভাবে সিজার করা হয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ ছাড়া কেউ সিজার করতে পারবে না।