কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা বয়স কারচুপি!শিশু বয়সে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ?
প্রকাশিতঃ ২৯/০১/২১ ইং
জেলা প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের মৃত. আমিনুজ্জামানের ছেলে শেখ আবু হানিফ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও এখন পুরোদস্তুর মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বটতৈল এলাকার বাসিন্দা ৯০ উর্ধো এক বৃদ্ধা জানান, সে কোন ভাবেই মুক্তিযোদ্ধা না, মুক্তিযোদ্ধা কেমন করে হবে সেতো তখন শিশু বাচ্চা ছিলো।’ এ এভাবেই অনেকেই মন্তব্য করেন ৭১ একজন শিশু আজ কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলো?শেখ আবু হানিফের বয়স নিয়ে সম্প্রতি জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।
স্কুল ভর্তির বয়স ও জাতিয় পরিচয়পত্র থেকে বয়সের ভিন্নতা জানাজানি হলে বিষয়টি সামনে আসে। একজন জানান তিনি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স বৃদ্ধি করে। এ নিয়ে জেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে নানা প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, আবু হানিফ কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেনি। অসৎ উপায়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহন করেছেন। স্কুল ভর্তি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়সের তারতর্মের স্পস্ট প্রমান রয়েছে। যা তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করেন অনেকেই।
এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন এবং প্রকৃত যাচাই বাচাইয়ের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার চেষ্টা চালান। তিনি তখন ব্যার্থ হলে পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ১২ মে ৯৮ গেজেটের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন। কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে কে,এস,এম ঢাকা মিনাপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয়ের প্রধানের প্রনয়ন করা প্রত্যয়ন পত্র থেকে জানা যায় তখন তার বয়স ছিলো ১০ বছর। পরে ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল ঐ বিদ্যালয় থেকে টি,সি নিয়ে আবু হানিফ অনত্র ভর্তি হন। তখন তার জন্ম তারিখ ছিলো ৪ /০৯/১৯৬০।
আবু হানিফের ১৯৮৬ সালের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ৮ বছর ৭ মাস ছিলো বলে জানাগেছে। চতুর আবু হানিফ তৎকালীন সময়ে ঢাকা নির্বাচন অফিসে তার চাচাতে ভাই ওমর ফারুকের চাকুরীর সূত্রে কৌশলে তার মাধ্যমে ২০০৫ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে বয়স বৃদ্ধি করে।
উক্ত সকল তথ্যের উপর তদন্ত করলে তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারচুপি বেড়িয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
এদিকে ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া সদরের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক শেখ আবু হানিফ অমুক্তিযোদ্ধা প্রমানিত হয়। তখন দিধা বিভক্ত রায় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয় এবং নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ । পরবর্তিতে আবু হানিফ আপিল করে কমিটির অসাধু ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে আবারও নাম অন্তর্ভুক্ত করে নেন। এই বিষয়টি তৎকালিন সময়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে তার বিষয়টি ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে।গত ২৮/০১/২১ ইংতারিখে আবারো অনলাইন নিউজ পোটালে হানিয়ের নিউজ প্রকাশিত হয়
আবু হানিফের বিষয়ে আরো জানা যায়, তিনি ১৯৯৩ সালে হত্যা মামলার সাজা ভোগ করে জেল থেকে বের হলে সে সময়ের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল খালেক চন্টু তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেন। তার মামলা নং- ১২/৮১। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুব দলের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন আবু হানিফ। জেল থেকে বের হয়ে আবু হানিফ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর সালাম মাস্টারের সাথে রাজনীতিতে সক্রীয় ভুমিকা রাখেন। তার পরিবারের সকল সদস্য এখনও জামায়াত বিএনপি, চরমোনাই এবং জাতীয় পার্টির সক্রীয় নেতা কর্মী।তার চাচাতো ভাই সাবেক মেম্বার মাহাতাব উদ্দিন বটতৈল ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন বিএপির প্রকাশনা সম্পাদক।তার আপন ভাই শেখ শিহাব চরমোনাইয়ের রোকন। আবু হানিফকে জামায়াত বিএপির সাথে সম্পৃক্ত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা। কানাঘুষা চলছে আবু হানিফ কৌশলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বটতৈল ইউনিয়ন থেকে নৌকার টিকিট পাওয়ার জন্য লবিং করছে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা ।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।