মোঃ জহুরুল ইসলাম সৈকত,
শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শিবগঞ্জে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সার। পটাশ ও ইউরিয়াসহ প্রায় সব ধরনের সারই বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে কৃষকের। ডিলাররা বলছেন, আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করলেও খুচরা পর্যায়ের দোকানিরা কৃষকদের মাঝে দাম বৃদ্ধির আতঙ্ক তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করে থাকতে পারে।
গত শুক্রবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক, দেউলী মোকামতলা, রায়নগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কৃষক ও সার বিক্রেতার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এসব এলাকায় প্রতি ৫০ কেজি বস্তা পটাশ (এমওপি) সার বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য সাড়ে ৭ শ টাকা। এছাড়া সরকার নির্ধারিত ১১০০ টাকা বস্তার টিএসপি ১৮০০ টাকা, ৮ শ টাকা বস্তার ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়। এদিকে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ২০ (বিশ) টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি ২২ (বাইশ) টাকা সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য পুননির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা কেজি দরে।
এ ব্যাপারে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের পাকুরতলা বন্দরের কীটনাশক ব্যবসায়ী ও খুচরা সার বিক্রেতা মিনহাজ বলেন, আমি মোকামতলা বন্দরের মামুন ট্রেডার্সে পাইকারি দামে পটাশ কিনতে গেলে তারা বলে পটাশ নাই। তবে বেশি টাকা দিলে ব্যবস্থা করা যাবে। তখন বাধ্য হয়ে ১৫শ টাকা বস্তা পটাশ সার কিনেছি।
উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের জাবারিপুর বাজারের বাদশা ট্রেডার্স এর সার ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, বর্তমানে প্রতি বস্তা পটাশ ১৫শ টাকা দরে বিক্রি করছি। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে পটাশ সারের সংকট চলছে। এই সার পাওয়াই যাচ্ছে না।
মোকামতলা বন্দরের মামুন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মামুন হোসেন ১৫শ টাকা বস্তা পটাশ সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার দোকানে পটাশ সার নাই। আমি পটাশ বিক্রি করিনি।
এদিকে সারের আকাশচুম্বী দামে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান হওয়ার আশঙ্কা তাদের। চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়া ও কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আর এতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বর্গা চাষিরা।
রায়নগর ইউনিয়নের টেপাগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমি ১৪ শ টাকা বস্তা পটাশ কিনেছি। এছাড়া টিএসপি (পতেঙ্গা) ১৮ শ, ডিএপি ১১ শ ও ইউরিয়া ১৩০০ টাকা বস্তা কিনেছি। কোন সার দোকানি এক টাকাও কম নেয়নি।
দেউলী ইউনিয়নের বিহারপুর গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, পটাশ বর্তমানে ১৫ শত টাকা বস্তা কিনতে হচ্ছে। তাও সহজে মিলছেনা। ইউরিয়ার দামও ১৩ শ টাকা বস্তা। আমরা কিভাবে আবাদ করবো বুঝতে পারছিনা। এভাবে চললে খরচের টাকাইতো উঠবেনা।
উপজেলার কিচক ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, কিচকের সারের দোকান গুলোতে বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫ শ টাকা বস্তা দরে পটাশ বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার কাশিপুর গ্রামের বর্গাচাষি সবুজ মিয়া জানান, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলাই। সার ও কিটনাশকের যা দাম তাতে হয়তো খরচের টাকাও উঠবেনা।
এব্যাপারে মোকামতলা ইউনিয়নের সারের ডিলার ও মোকামতলা ফারুক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান রায়হান বলেন, আমরা নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করছি। আমাদের কাছে পটাশ সারের ঘাটতি নাই। ক্রেতাদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন,খুচরা পর্যায়ের দোকানিরা কৃষকদের মাঝে দাম বৃদ্ধির আতঙ্ক তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে থাকতে পারে। তবে আমাদের কাছে আসলে নির্ধারিত মূল্যেই সার পাবে কৃষকরা।
কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে পটাশ সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। খুচরা বিক্রেতারা বাহিরের ডিলারদের থেকে সার কিনে হয়তো চড়া দামে বিক্রি করছে। সেজন্য আমরা ডিলারের নিকট থেকে সার কিনতে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। ডিলারদের থেকে ন্যায্য মূল্যে সার কিনলে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। বর্তমানে ডিলাররা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন। আমাদের নির্ধারিত ডিলার যদি সারের দাম বেশি নিয়ে থাকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।