কে এই নাফতালি বেনেট ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ? হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃবিতর্কিত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আরও এক ধাপ কাছে চলে এসেছেন আরেক বিতর্কিত নাম নাফতালি বেনেট।
বিবিসির প্রতিবেদনে নাফতালিকে ‘উগ্র-জাতীয়তাবাদী’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল-জাজিরা তাকে পরিচয় করাতে গিয়ে ‘ডানপন্থী ধর্মীয় বক্তা’ উল্লেখ করেছে।
মার্কিন বংশোদ্ভূত বেনেট স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো। রায়ানা শহরে চার সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে তার বসবাস। মিলিয়নিয়ার এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ২০০৫ সালে নিজের স্টার্টআপ ১৪৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে রাজনীতিতে নামেন। পরের বছর নেতানিয়াহুর চিফ অব স্ট্যাফ নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে নেতানিয়াহুর অফিস ছেড়ে দখলকৃত ওয়েস্ট ব্যাংকে ইহুদি সেটেলারদের হয়ে লবিং করা ইয়েসা কাউন্সিলের প্রধান হন। রাজনীতিতে ঝড় তোলেন ২০১২ সালে। ওই সময় তিনি কট্টর ডানপন্থী জিউস হোম পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন বিষয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন।
২০১৩ সালে ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওদের মুক্তি না দিয়ে হত্যা করা উচিত।’
নাফতালি বেনেট মধ্যপন্থী ইয়াইর লাপিদের সাথে আলোচনায় বসবেন এমন ঘোষণার পর নেতানিয়াহু ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যাতে কোনো ধরনের চুক্তিতে সমর্থন না দেয়।
নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য বুধবার পর্যন্ত সময় হাতে পাবেন লাপিদ। তিনি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে তা হবে দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকা নেতানিয়াহুর ক্ষমতার অবসান। নেতানিয়াহু বেনেটের বিরুদ্ধে ‘জনগণকে ভুল পথে চালিত করা’ এবং ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ করার অভিযোগ এনেছেন।
এক টেলিভিশন ভাষণে ৪৯ বছর বয়সী বেনেট বলেছিলেন যে, জোট গঠন করতে তার দল আলোচনায় অংশ নেবে।
‘নেতানিয়াহু কোনো ডানপন্থী দল গঠন করার চেষ্টা করছেন না কারণ তিনি ভালভাবেই জানেন যে তা সম্ভব নয়। তিনি পুরো জাতি, পুরো দেশ তার নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান পোক্ত করার জন্য পেতে চাইছেন,’ বলেন বেনেট।
‘আমার বন্ধু ইয়াইর লাপিদের সাথে একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের জন্য সবকিছু করবো।’
এই ঘোষণার আগে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, জোটের শর্ত অনুযায়ী, বেনেট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর জায়গা নেবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর ৫৭ বছর বয়সী লাপিদকে সে জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো চুক্তি করা হয়নি।
প্রস্তাবিত জোট সরকারে ইসরায়েলি রাজনীতির ডান, বাম এবং মধ্যপন্থী- সবারই সন্নিবেশ ঘটবে। এই দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলেও তারা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে একমত।
নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর লাপিদ যিনি সাবেক একজন অর্থমন্ত্রী, তাকে ২ জুন পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের সময় দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে তার ইয়েশ আতিদ পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে আসে। প্রথম অবস্থানে ছিল নেতানিয়াহুর ডানপন্থী দল লিকুদ পার্টি। ১২০ আসনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আসন পেয়েছে বেনেটের দল যা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট গঠনে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম।
শনিবার রাতে, নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট এবং আরো একটি সম্ভাব্য জোট দলের নেতাকে জোট গঠনের প্রস্তাব দেয়। যাতে করে পালাক্রমে তিনজনই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে তার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি নেতারা। রবিবারও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
ইসরায়েলের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার শর্ত থাকায় কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন লাভ করা সম্ভব নয়। জোট সরকার গঠনের জন্য ছোট ছোট দলগুলোকেও দরকার হয়।
লাপিদকে প্রাথমিকভাবে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ১১ দিন ধরে গাজা সহিংসতার কারণে এই সময় কমে এসেছে।