কোন উপায়ে বয়স বাড়িয়ে অপ্রাপ্তদের বিয়ে দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা-ওসি এজাজ শফী।
খুলনা জেলা প্রতিনিধি
পাইকগাছায় বাল্য বিবাহ বন্ধে থানা পুলিশ কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। সম্প্রতি উপজেলা পুলিশিং কমিটির সভায় ওসি এজাজ শফী হুশিয়ারী করে বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যান, আইনজীবি ও বিয়ের রেজিস্টারদের এ ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ্যফিডেপিট করে বয়স বাড়িয়ে বাল্য বিয়ের ব্যাবস্থা করা হয়। ওসি মোঃ এজাজ শফী ব্যাপারে পাইকগাছা আইনজীবী সমিতিতে নোটারিয়ান আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। মতবিনিময় করেছেন ইউপি জনপ্রতিনিধিদের সাথে।জানিয়ে দিয়েছেন, যে সব নোটারিয়ান এফিডেপিট'র মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে অ-প্রাপ্ত নারীদের বাল্য বিয়ের পথে ঠেলে দিচ্ছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।এদিকে বাল্য বিয়ের কুফল ও সমাজের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।থেকে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাঃ সুজন কুমার সরকার তার মতামত তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। অল্প বয়সে বিয়ের ফলে অধিক সন্তানের জন্ম ঝুঁকি ও অপুষ্টিতে ভোগা এবং শারীরিক বিভিন্ন সাধারন রোগ তথা জরায়ুর ক্যান্সার পর্যন্ত হয়। অপরিনত বয়সে মা হওয়ার কারনে প্রসব কালীন বিভিন্ন ধরনের জটিলতার জন্য সিজারিয়ান ডেলিভারীর প্রবনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন হাড় বা অস্তি রোগের সম্মুখীন হয়। তিনি আরোও জানান,সমাজের নিন্মমধ্যবিত্ত অশিক্ষিত অসচেতন অভিভাবকরা মেয়ের বিয়ে টাকে ( মাসিকের পর -পরই) বড় বোঝা মনে করে সামাজিক দায়বদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত হতে চায়। ডাঃ সুজন-এ কুসংস্কার থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারী, বে-সরকারী পর্যায়ে উদ্যোগ সহ সর্বস্তরের মানুষ মিলে-মিশে চেষ্টা করলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন।
এ সম্পর্কে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সরদার আলী আহসান বলেছেন, নারীর শারীরিক পরিপূর্নতা না হয়ে বিয়ে হলে যে শিশু জন্ম গ্রহন করে তার শারিরিক পরিপুর্নতা পায়না ও বিকলঙ্গ হবার সম্ভাবনা থাকে এমনকি মানসিক রোগ গ্রস্থ হতে পারে। বাল্য বিয়ের কারনে অ-প্রাপ্ত নারীর যেমন স্বামী সন্তানের চাহিদা মেটাতে হয়, তেমনী শ্বশুর-শ্বাশড়ী, দেবর সহ সংসারের অন্যান্যদেরও দেখভাল করতে হয়। এক সময় শ্বাশড়ী ননদের ছড়ি ঘোরানোর ফলে সে অসুস্থ হয়ে রোগ গ্রস্থ হয়ে পড়লে সংসারে অশান্তি ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। এর ফলে ঝগড়া-বিবাদ সহ এক পর্যায়ে ছাড়া-ছাড়ি বা ডিভোর্স ও মামলা-মোকদ্দমা এমনকি শেষ পরিনতি হত্যা বা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরোও জানান, বাল্য বিয়ের কারনে বুদ্ধির বিকাশ ঘটেনা, সমাজে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি,যৌতুক দাবী ও মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। করনীয় সম্পর্কে তিনি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে মতবিনিয় সভা,সেমিনার তথা সরকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেছেন। এ সম্পর্কে ইতোপুর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,বি,এম,খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেছেন সমাজে বাল্য বিবাহ মারাত্মক একটি অপরাধ। এর ফলে উন্নয়ন অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এ অপরাধের সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলে তিনি এ উপজেলায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে দায়িত্বশীলদের সহযোগিতার আহবান জানান।