কয়রায় অসহায়দের সহায়” কয়রা ব্লাড ব্যাংক”
মোমিনুল ইসলামঃ (প্রতিনিধি) কয়রা,খুলনা
গত ২৬ মার্চ দেশে তখন করোনা মহামারীর সূচনালগ্ন। লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, হোম কোয়ারেন্টিন, মাস্ক, পিপিই এসব শব্দের সাথে খুলনার কয়রা উপজেলার সর্বস্তরের জনগনের তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি। সরকারি নির্দেশনায় জরুরী পণ্যের দোকান ব্যতীত সব কিছুই বন্ধ। বিনা প্রয়োজনের ঘর থেকে বের হলেও আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে নানান জবাবদিহিতা। তাই কে রাখে কার খবর। খাবার হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে কয়রা বাজার ও তার আশ-পাশ এলাকার প্রায় বিষের অধিক ভারসাম্যহীন। করোনা ভাইরাসের মোকাবেলায় শুরু থেকে এক ভিন্নধর্মী সেবা প্রদান করে আসছে সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “কয়রা ব্লাড ব্যাংক”। রাস্তায় পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীনদের (পাগল)মাঝে নিরবে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
এই মহানুভব সামাজিক সংগঠন ‘কয়রা ব্লাড ব্যাংক’ গঠনের মূল কাজে জড়িত কয়েকজন মানবিক তরুন যুবক । রাতের খাবার দিচ্ছে উপজেলার ছয় যুবক সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিজেদের আয়োজনে রান্না করা খাবারের প্যাকেট পানির বোতল নিয়ে ভারসাম্যহীনদের খুঁজে খুঁজে খাবার দিচ্ছে। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও দুই তিন দিনের মধ্যেই ভারসাম্যহীনরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাকিয়ে থাকে কখন আসছে খাবার। ‘কয়রা ব্লাড ব্যাংক’ এর কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের দিক নির্দেশনা, আন্তরিকতা ও আর্থিক সহযোগিতা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করেছে বলে জানা যায়।
সংগঠনের প্রধান সোহাগ বাবু বলেন, কয়রা ব্লাড ব্যাংক কয়রার মাটিতে একটি মানুষও যাতে রক্তের অভাবে মৃত্যু বরন না করে সেই লক্ষে প্রথম থেকে কাজ করে চলেছে। পাশা পাশি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজ ও করছে। সেই দায়িত্বরোধ থেকেই গোপনে এই ভারসাম্যহীনদের খাবারের এই কার্যক্রম শুরু করি আমরা। মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তার পাশাপাশি এই শীতে তাদেরসহ অসহায় হতদরিদ্রদের শীত বস্ত্র দেওয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। উদ্দেশ্য অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য ও শীতবস্ত্র পৌঁছে দেওয়া। যা চলমান রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের এই কর্মকান্ডকে একটি বিরল দৃষ্টান্ত বলে জানান। এদিকে রাতের খাবার রান্না করে পানিসহ প্যাকেট নিয়ে তাদের খুঁজে বেড়ায় কয়রা ব্লাড ব্যাংকের উদীয়মান মানবিক কয়েকজন তরুন যুবক। সন্ধা, কখন ও রাত থেকেই মোবাইলের আলোতে বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তন্ন তন্ন করে তাদের খুঁজে বেড়ায় মোস্তাফিজ, রনি, দিদারুল,ইমদাদুল, হাসানুল,ইমরান,রিপন, হুমায়ুন কবির।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম রনি জানায়, ঘরে বসে যখন নিজেরা খাবার খেতাম তখন তাদের জন্য প্রাণ কেঁদে উঠত। সেই অনুভুতি থেকেই আমরা কয়েকজন মিলে কার্যক্রম শুরু করি। তাদের হাতে রাতের খাবারটুকু পৌঁছে দিতে পেরে নিজেরা খেয়েও আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। সচেতন মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তরুণদের এমন মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
Leave a Reply