আনোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের নাম সর্বজনবিদিত। তিনি একজন স্বনামখ্যাত আইনজ্ঞ তো বটেই, একই সাথে ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর অধিক সময় আইন অঙ্গনে বিচরণ করছেন। আইনজীবী হিসেবে অসংখ্য ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেছেন ও আইনের সুচিন্তিত ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারকদের সঠিক রায় দিতে সহায়তা করেছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের চারবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দুইবার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। আইনজীবীদের মধ্য তিনি কতটা জনপ্রিয় ইহা তারই প্রমাণ। তার মৃত্যুর পর দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত তার নামাজে জানা যায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী যথার্থই বলেছেন "আইন অঙ্গনের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়ল"।
অনেক আইনজীবী তার জুনিয়র হিসেবে কাজ করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন বারের সুনামের সাথে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। আবার কেউ হাইকোর্টের বিচারকের পদে অতিষ্ঠ হয়েছেন। কেহ মন্ত্রী/এমপিও হয়েছেন। তিনি জুনিয়র আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি অনেক অস্বচ্ছল আইনজীবীদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। অনেক দরিদ্র বিচার প্রার্থীর মামলা সম্পন্ন বিনামূল্যে করে দিয়েছেন। বিতর্কিত কোন ব্যক্তির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তার যুক্তি ছিল ``বিচার প্রার্থী যে দলের বা মতের হোক না কেন তাকে আইনের সহযোগিতা দেওয়া আমার পেশাগত দায়িত্ব``। সেজন্যই তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর ও পেশার মানুষের কাছে ছিলেন সমভাবে প্রিয়।
তার জুনিয়র হিসেবে তার কাছে আইন পেশায় যারা দীক্ষা নিয়েছেন তাদের মধ্যে এডভোকেট প্রয়াত আবুল কাশেম(পটুয়াখালী পৌরসভার, সাবেক চেয়ারম্যান), এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, এডভোকেট শাহ আলম (বর্তমানে বসুন্ধরা বসবাসরত), এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, অ্যাডভোকেট শাহ মোঃ জহুরুল হক, অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া (সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল), এডভোকেট হারুন অর রশিদ (সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল), এডভোকেট খন্দকার বশির আহমেদ, এডভোকেট গুলজার হোসেন, এডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, এডভোকেট তাহা মোল্লা, অ্যাডভোকেট জাহানারা সরকার, অ্যাডভোকেট একে খান উজ্জ্বল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাসুদ রানা, এডভোকেট শিশির মনির, এডভোকেট নাসরিন খন্দকার, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান দুলাল সহ আছেন আরও আইনজীবী।
সমুদ্রবিধৌত বরগুনা জেলার বামনায় ১৯৩৮ সালের ২০শে মার্চ তার জন্ম এবং ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে সম্পা, ছেলে ডাক্তার খন্দকার সোহেল মাহবুব ও এডভোকেট খন্দকার শোয়েব মাহবুব, সকলেই স্বপরিবারে আমেরিকা প্রবাসী। অবশ্য ছোট ছেলে সোয়েব বেশির ভাগ সময় দেশে থাকেন।
তার সাথে আমার পরিচয় প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে সেই ১৯৭৮/৭৯ সাল থেকে। এই দীর্ঘ সময় তার সাথে আমার কত স্মৃতি। তখন তার চেম্বার ছিল ঢাকার মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের তিন তলায়। সন্ধ্যার পর তার জুনিয়র আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের ভিড়ে স্থানটি ছিল মুখরিত। আমি ১৯৮০ সালে ঢাকার ওয়ারীতে তার প্রতিষ্ঠিত বিএনএসবি ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে(বর্তমানে খন্দকার মাহবুব হোসেন চক্ষু হাসপাতাল) যোগদান করি। তারপর থেকে তার সাথে আমার সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়। সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ সাহেব হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত ও Suggestion জানার জন্য আমাকে প্রায়ই মধুমিতা সিনেমা হলে তার চেম্বারে পাঠাতেন। তাই দীর্ঘদিন তাকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার ও জানার সৌভাগ্য হয়েছে।
তিনি ৭০ দশকের প্রথম দিকে দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ সংগ্রামী নারীর নেত্রী প্রয়াত আইভির রহমানকে সাথে নিয়ে পুরান ঢাকার বকশিবাজারে অরফানেজ রোডে প্রতিষ্ঠা করেছেন Bangladesh National Society for the Blind (BNSB)। তারপর থেকে (১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ এই কয় বছর ছাড়া) আমৃত্যু তিনি ইহার চেয়ারম্যান ছিলেন। আইভি রহমানও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত (২০০৪) ইহার সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন।
সমিতির অফিসের যখনই আসতেন-দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দেখলে সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করতেন--কেমন আছো? তারা ওনার কন্ঠ শুনে সঙ্গে সঙ্গে বলতেন-কে? মাহবুব স্যার? আপনি কেমন আছেন স্যার। তারা সবাই ছিল উনার ভক্ত ও অনুরাগী। ১৯৭৫/ ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকার ওয়ারীতে প্রতিষ্ঠা করেন বিএনএসবি ঢাকা চক্ষু হাসপাতাল। বর্তমানে তার প্রাণপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠান "খন্দকার মাহবুব হোসেন চক্ষু হাসপাতাল"ঢাকার মিরপুরে সমিতির নিজস্ব জমিতে অবস্থিত। অভিজ্ঞ চিকিৎসকমন্ডলী ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে স্বল্প খরচে হাসপাতালটি অত্যন্ত সুনামের সাথে চক্ষু রোগীদের উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসিতেছে। এই হাসপাতালই ছিল তার ধ্যান- জ্ঞান। প্রতি শনিবার হাসপাতালে আসতেন। সময় পেলে অন্য সময়ও চলে আসতেন। আমাদের দিক নির্দেশনা দিতেন। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। তাছাড়া সকাল দুপুর-রাত যখনই টেলিফোন করতাম - যেখানে যে অবস্থায় থাকতেন - টেলিফোন ধড়তেন। পারিবারিক বা তার নিজের পেশাগত কাজের চাইতেও হাসপাতালের কাজকে অগ্রাধিকার দিতেন।
তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর দ্যা ব্লাইন্ড (VTCB)।যাহা এখন মিরপুরে নিজস্ব জমিতে অবস্থিত। সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও পঙ্গু ব্যক্তিরা হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পরে অনেকেই নিজ হাতে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। তিনি মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। মানুষের সেবা করাই ছিল তার আনন্দ।কত মানুষের জন্য যে কত কিছু করেছেন। কাউকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে, কাউকে চাকরি দিয়ে, কারও জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। নতুবা সদুপদেশ দিয়ে।
তিনি গ্রাম গঞ্জের প্রত্যান্ত অঞ্চলে অভিজ্ঞ সার্জনসহ মেডিকেল টিম নিয়ে ভ্রাম্যমান চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে দরিদ্র রোগীদের চক্ষু অপারেশনের ব্যবস্থা করেছেন। আমাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায়সই বিভিন্ন স্থানে চক্ষু শিবির উদ্বোধনের জন্য যেতেন। একবার বাংলাদেশ সফররত পশ্চিম জার্মানীর ( বর্তমানে জার্মানী) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিঃ ওয়াইজ সেকারকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী চক্ষু শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মীর শওকত ( পরবর্তীতে মন্ত্রী ও এমপি) ও জার্মানির দাতা সংস্থা আন্ধেরী হিলফি সভাপতি মিস রোজি গোলম্যান। আর একবার তার সাথে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও আইভি রহমানসহ ওনাদের বাড়ী কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং কটিয়াদী গিয়েছি। ভৈরবের বাড়িতে আমাদেরকে আপ্যায়ন করেছেন। আবার ওনাদের সাথে চাঁদপুরের চন্দ্রায় চক্ষু শিবিরে গিয়েছি। প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী মেজর জেনারেল শামসুল হক।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর চক্ষু শিবিরে আমাদের সাথে গিয়েছিলেন কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর আর.পি.সাহার বড় মেয়ে বিজয়া সাহার স্বামী ব্যারিস্টার শওকত আলী খান। চাক্ষু শিবির উদ্বোধন শেষে দুপুরে খাওয়ার পর সেখানকার দিঘির পূর্ব পাড়ে ডাক বাংলোতে আমরা বিশ্রাম করি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমদের বাড়ির জামালপুরের মাদারগঞ্জ, এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়ী নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর, ধনাট্য ব্যবসায়ী বাবুলদের উদ্যোগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্রয়াত ডাঃ মোঃ জাহেদ সাহেবের উদ্যোগে ফরিদপুর সদরে এবং আটরশি মরহুম পীর সাহেবের বাড়িতে, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, ডেমরার ছনপাড়া, মানিকগঞ্জের শিবালয় সহ আরও অনেক স্থানে তার সাথে চক্ষু শিবিরে গিয়েছি। সকল স্থানেই চক্ষু শিবির শেষে আন্তরিকতার সাথে আমাদেরকে আপ্যায়ন করেছেন। ফরিদপুরে গিয়ে কখনো হোটেল লাক্সারী, কোনো সময় ওয়াপদার ডাকবাংলা, আবার কোন বছর সিএন্ডবি ডাকবাংলায় দুজনেই থেকেছি। চেয়ারম্যান সাহেবের আদি নিবাস ভাঙ্গা থানার গোয়ালদি ও পার্শ্ববর্তী মালিগ্রাম বাজারে কয়েক বার চক্ষু শিবির উদ্বোধনে গিয়েছি। আবার যশোরে গিয়ে অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান সাহেবের তৎকালীন ভাড়া করা দোতালা বাসায় থেকেছি। বরিশাল যাওয়ার পথে টেকেরহাট ফেরিঘাটে হোটেলে রান্না করা বিভিন্ন প্রকারের তাজা মাছ দিয়ে দুপুরে ভাত খেয়েছি।
তাছাড়া পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ (Site Selection) করতে প্রয়াত সাধারণ সম্পাদিকা আইভি আপা, এডভোকেট প্রয়াত সাহারা খাতুন (পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সহ আমরা পটুয়াখালী গিয়েছি। সঙ্গে সেবা সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক জি.এস.প্যারোরা সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। পটুয়াখালী শাখার তৎকালীন সভাপতি ও পৌরসভার চেয়ারম্যান এডভোকেট প্রয়াত কাশেম সাহেবের বাসায় নদীর বড় পাঙ্গাস মাছ দিয়ে সকলের মিলে ভুরিভোজ। আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এভাবে কত জায়গায় স্যারের সাথে ঘুরে বেরিয়েছি। কোন জায়গায় ডাক বাংলায়, কোন জায়গায় হোটেলে থেকেছি। এভাবে আরও কত জায়গায় কত স্মৃতি।
তিনি খুব সময় সচেতন ছিলেন। ঢাকার বাহিরে তার সাথে যতবার গিয়েছি - রওয়ানা হওয়ার নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কাপড়-চোপড় পরে রেডী হয়ে বাসায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেন। সেটা যদি ভোর ৫টা বা ৬টা হয় তবুও। বিয়েসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হতেন। অনেক সময় দেখা যেত তখন পর্যন্ত কোন মেহমান এমনকি Host রা ও এসে পৌছাননি। অথচ তিনি পৌঁছে গেছেন।
তিনি আত্মবিশ্বাসীও ছিলেন। মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হল থেকে যখন খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া নিজ বাড়িতে চেম্বার স্থানান্তর করেন তখন এলাকাটি তত উন্নত ছিল না এমনকি রাস্তা ঘাটের অবস্থাও ভাল ছিল না। আমি বলেছিলাম - মতিঝিলের এত জমজমাট চেম্বার শীফট করে এখানে নিয়ে এলেন। একে তো দূরে, আবার রাস্তা ঘাটের এই অবস্থা। Client আসবে তো? বললেন "আস্তে আস্তে আসবে"। ঠিকই চেম্বার জমে উঠতে বেশিদিন লাগেনি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।
তার আতিথেয়তা ছিল মুগ্ধ হওয়ার মত। চেম্বারে বা বাসায় যখনই গেয়েছি কখনও খালি মুখে আসতে দেননি। ঢাকার ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবের তার মেয়ে শম্পার বিয়েতে যে সুস্বাদু বিরিয়ানী খেয়েছি আজও তা মনে আছে। তার সহধর্মিণী অধ্যাপিকা ফারহাত হোসেন বর্তমানে সমিতির চেয়ারম্যান। উচ্চ শিক্ষিত এই নারী সর্বক্ষণ তার ছায়াসঙ্গী হয়ে ক্লান্তহীনভাবে স্বামীর সেবা করে গেছেন। চেয়ারম্যান মহোদয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ঢাকা এভার কেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি থাকার সময় দিন রাত নিজের নিরাপত্তার কথার না ভেবে সর্বক্ষণ স্বামীর পাশে থেকে যে সেবা ও সাহস দেখিয়েছেন তা এক কথায় অতুলনীয়।
সর্বশেষ যেদিন চেয়ারম্যান স্যার তার সহধর্মিণীকে নিয়ে বিএনএসবিতে এলেন সেদিন তিন তলায় না উঠে তার রুমে না গিয়ে হাসপাতালে নিচ তলায় বর্হি বিভাগে বসলেন। আমাকে পাশে বসিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করলেন। বারে বারে সামনে, ডানে বামে তাকালেন। বহি বিভাগে কর্মরত বিভিন্ন সেকশনের স্টাফদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। হাসপাতালে চীফ কনসালট্যান্ট ডাঃ মোহাম্মদ আলী আহসান এসে কথা বললেন। পরিচালক খন্দকার মহিদুল ইসলাম মোর্শেদ, উপ-পরিচালক (হিসাব) মোঃ গোলাম মোস্তফা, আইটি ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ, সহকারী পরিচালক আল আমিন, সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম সজিব, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং স্টাফদের সাথেও কথা বললেন।যাওয়ার সময় যেন উদাস দৃষ্টিতে আবার সব দিকে তাকালেন।এটাই যে ছিল বিএনএসবিতে তার শেষ আসা - এখনও তা ভাবতে কষ্ট হয়।
তিনি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতেন। রুচিশীল পোশাক পড়তেন। অত্যন্ত সৌখিন ছিলেন,অতি বিচক্ষণ ও প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন স্বকীয়তার সাথে। তার চলাফেরা কর্মনিষ্ঠা, উপস্থিতবুদ্ধি, এই বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয়। পরিশেষে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
লেখকঃ
আনোয়ার হোসেন।
মহাপরিচালক,
খন্দকার মাহবুব হোসেন চক্ষু হাসপাতাল।