খুলনার পাইকগাছা পাটের বাজার ভালো বেড়েছে আবাদ ও উৎপাদন
শেখ খায়রুল ইসলাম পাইকগাছা খুলনা প্রতিনিধি :-
উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়ায় পাইকগাছায় আবাদ বেড়েছে পাটের। তবে প্রথমত অনাবৃষ্টিতে বীজ বপনে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে স্বাভাবিক বৃষ্টিতে ভাল হয়েছে পাটের আবাদ।কৃষি অফিস জানায়, এবার উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পাটের। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৮৫ হেক্টর। গতবারের চেয়ে এবার আবাদ বেড়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে।
লবণাক্ত পাইকগাছার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভার কিছু অংশ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, কয়েক বছর পাটের দাম কম ও খানা-খন্দক কমে যাওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার জায়গার অভাবে এক জায়গায় একাধিকবার পাট জাগ দিতে হয়। এতে সময়মত পাট জাগ দিতে না পারায় পাটের আঁশ ভাল পাওয়া যায়না। এমনি নানা সংকটে উপজেলায় পাটের আবাদ কমে যায়। তবে গত বছর পাটের দাম ভাল পাওয়ায় এবার কৃষকরা ফের পাট চাষে ঝুঁকেছেন।
কৃষকদের অনেকে জানান, চলতি বছর অনাবৃষ্টিতে কৃষকরা সময়মত বীজ বপন করতে পারেননি। তাই দেরীতে বীজ বপন করেছেন অনেকে। কেউ কেউ সেচ দিয়ে পাটের বীজ বপন করেছেন। তবে পরবর্তীতে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ ভাল হয়েছে।
এদিকে পাট অধিদপ্তরের পক্ষে পাট চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে রাসায়নিক সরবরাহ করা হয়েছে। জনপ্রতি ৪ কেজি ইউরিয়া, ৬ কেজি টিএসপি ও ৩ কেজি করে এমওপি সার সরবরাহ করা হয় ঐ প্যাকেজে। এছাড়া কৃষি অফিসের পক্ষে পাটের বীজ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার পাইকগাছায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি অফিসের পাশাপাশি কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এর আগে প্রথম লবণসহিষ্ণু জাত হিসেবে বিজেআরআই দেশি পাট-৮ ছিল। এখন বিজেআরআই দেশি পাট-১০ অনুমোদন পেয়েছে। যা দেশি পাট-৮ থেকে ৩ ডিএস/এম (ডেসিসিমেন্স পার মিটার-লবণাক্ততার একক) বেশি লবণসহিষ্ণু। এ পাট ১২ ডিএস/এম লবণাক্ত জমিতে ভাল হবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) সূত্রের বরাদ দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত দেশি পাট-১০-এর জাত অবমুক্ত করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়েরর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৪ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ জাতের পাটের উদ্ভাবন টিমের প্রধান ছিলেন বিজেআরআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি) কৃষিবিদ ড. নার্গীস আক্তার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ জাতের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা পাট চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।
তিনি জানান, এ জাতের পাটের গাছের বয়স ১০৫-১১০ দিনে কেটে ফেললে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা মাঠে প্রতি হেক্টরে এর ফলন পাবেন ৩ টন। এছাড়া পাট কাঠির ফলন হবে ৭ টনেরও বেশি। এ পাটের কান্ড হবে সম্পূর্ণ সবুজ। পাতা গোলাকার ও বর্শাফলাকৃতির।
এদিকে বিজেআরআইয়ের দেয়া তথ্য বলছে, পাট চাষাবাদ লাভজনক করা এবং পরিবেশবান্ধব এ আঁশ ফসলের আবাদ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ পর্যন্ত পাট এবং পাট জাতীয় ফসলের ৪৬টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এরমধ্যে দেশি পাট ২৫টি, তোষা পাট ১৫টি, কেনাফ ৪টি ও মেস্তা ২টি। এ জাতগুলোর মধ্যে বর্তমানে ৯টি দেশি, ৬টি তোষা, ৩টি কেনাফ এবং ২টি মেস্তা জাতের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও আবাদ হচ্ছে।
তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার পাইকগাছায় পাটের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আর উৎপাদনের পাশাপাশি দাম ভাল পেলে পাটের আবাদ ফিরে যাবে তার পুরনো ঠিকানায়। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষি অফিসের পাশাপাশি কৃষকের।
Leave a Reply