গাইবান্ধ সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি মো রিওন প্রামানিক জনি
অতি দরিদ্র পরিবারের কিশোরী (১৭)। হঠাৎ করেই হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা। কিছু দিন পরই পৃথিবীর আলো দেখবে গর্ভের সন্তানটি। কিন্তু কে এই সন্তানের পিতা? এখন গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় কিশোরী। ঘটনাটি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের।
সরেজমিন শনিবার (১৬ অক্টোর) গিয়ে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা ওই কিশোরীর চোখেমুখে হতাশা ও কলঙ্কের গ্লানি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সমাধা পায়নি। অবশেষে মামলার পথ বেছে নেয় ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবার।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মহেশপুর (কৃষ্ণপুর) গ্রামের বাদল সরকারের ছেলে সৌরভ সরকার (১৯)-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একই গ্রামের মৃত জনৈকের মেয়ে (১৭)-এর প্রেম-ভালোবাসা গড়ে ওঠে। এরপর প্রেমিক সৌরভ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দৈহিক মিলনে লিপ্ত হয়। ধারাবাহিকতায় কিশোরীকে বিয়ে করবে মর্মে ঢাকাসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে নিয়ে প্রায় এক মাস দৈহিক মিলন করে সৌরভ।
এরপর নানা কৌশলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিশোরীকে। এরই মধ্যে মাথাঘোরা ও বমি বমি ভাব হলে গত ৫ সেপ্টেম্বর কিশোরীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩১ সপ্তাহ ধরে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে জানান কর্তবরত চিকিৎসক। এ অবস্থায় প্রেমিক সৌরভকে বিয়ের কথা বলা হলে অস্বীকৃতি জানায় সে। বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ গাইবান্ধায় মামলা করেছে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ওই কিশোরী জানায়, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার যৌন মিলনে লিপ্ত হয় সৌরভ সরকার। কিন্তু বিয়ের কথা বলা হলেও সেটি মেনে নিচ্ছে না তার পরিবার। এমনকি সৌরভও গা-ঢাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছে বিচার চাওয়া হলে সেটির সমাধায় আসেনি সৌরভের পরিবার। উল্টো মিথ্যা কলঙ্ক জাহির করছে তারা।
কিশোরী আরও বলে, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রায় ৯ মাস চলেছে। আর কিছু দিন পরই ভূমিষ্ঠ হবে গর্ভের সন্তান। এখন কে হবে এই সন্তানের পিতা? সেটির বিচার চাই।
এ দিকে, নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় অনেকে জানান, কিশোরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সত্য। কিন্তু সৌরভের পরিবার প্রভাবশালী হওয়া মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ।
তবে এসব ঘটনা অস্বীকার করে সৌরভের পিতা বাদল সরকার বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করেছে। মেয়েটির চরিত্র অনেকটাই খারাপ। বিভিন্ন ছেলেকে দেহ দিয়ে থাকে। সেটি এখন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সুজন সরকার জানান, সৃষ্ট ঘটনাটি সমাধানের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি সমাধা করা সম্ভব হয়নি। এখন আদালতই রায় দেবেন, কে দোষী।