জাকির হোসেন সুমন সিলেট ব্যুরোঃ
সিলেটের গোলাপগঞ্জের মাঠের বয়স একশ বছরের অধিক। এ মাঠে খেলা করে বড় হয়েছেন এলাকার বয়োবৃদ্ধরাও। ১৯১৪ সালেরও আগ থেকে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা এলাকায় তৈরি হয় ‘বাঘা মাঠ’। অনুমান করা যায় সিলেট জেলার সবচেয়ে বৃহত্তর এ মাঠ। কিন্তু এবার মাঠের দিকে ‘ভূমিখেকো একটি চক্রের নজর পড়েছে’ বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জেলা প্রশাসকের নামে থাকা মাঠ হঠাৎ করে চলমান জরিপে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির নামে নামকরণ করে দখলের পায়তারা চলছে বলেও অভিযোগ। আর তাই মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসী চালিয়ে যাচ্ছেন লাগাতার আন্দোলন। কেবল তাই না, এ মাঠ রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাঘা মৌজার ৩ নং জেল এর অন্তর্ভুক্ত ১২০১ খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত এ মাঠের ভূমির পরিমাণ ৭ দশমিক ৬০ একর। যার দাগ নম্বর ২২২৯।
এদিকে সোমবার বিকেলে সরেজমিনে হাতালী এলাকায় গেলে দেখা যায় মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করছেন এলাকাবাসী। এ মানববন্ধনে সকল বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছেন।
মানববন্ধন শেষে কথা হয় ‘বাঁচাও হাতালী মাঠ’ আন্দোলনের মুখপাত্র আব্দুল আলিম শাহ’র সাথে। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘৫৬ রেকর্ডেও এ মাঠ জেলা প্রশাসকের নামে ছিলো। কিন্তু গোলাম রব্বানী চোধুরী মাঠটি দখলের উদ্দেশ্যে চলমান জরিপে এলাকাবাসীর অগোচরে ভূমি জরিপের সাথে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে মাঠটি উনার বাবা গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর নামে নামকরণ করে দখলের পায়তারা করছেন। তাই আমরা মাঠ রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে জেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখন আমরা চাই জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপে সরকারের মাঠ সরকারের নামে ফিরবে এবং এলাকার যুবসমাজ এ মাঠে খেলাধুলা করবে। তা না হলে মাঠ রক্ষায় প্রয়োজনে আমরা জীবন দেবো।
এদিকে অভিযুক্ত গোলাম রব্বানী চোধুরীর বক্তব্য নিতে তাঁর ব্যবহৃত ০১৭১৩….৩৫ নম্বরে কল দিলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে রেখে দেন।
তবে বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছানা মিয়া জানান, ‘আমি আমার ছোটবেলা থেকে এটা হাতালীর মাঠ হিসেবেই শুনে আসছি। এ মাঠে আমিও খেলেছি। যতটুকু জেনেছি ১৯১৪ সাল বা তাঁর আগে থেকেই সবাই হাতালির মাঠ হিসেবেই জানেন। কিন্তু বিএস রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে এটি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর নামে হয়ে গেছে। এজন্য এলাকাবাসী আন্দোলন করছেন।
অপরদিকে মাঠের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আমার জানা নেই। ব্যাপারটি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের সাথে আলোচনা করব।
তবে মাঠের জায়গা পূর্বে জেলা প্রশাসকের নামে থেকে থাকলে গুরুত্বসহকারে দেখে প্রয়োজনে মামলা করে হলেও ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে দাগ, খতিয়ান, মৌজা এবং জেল নম্বর জেনে নেন সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠ শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দিচ্ছি। প্রয়োজনে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে।