এম এ রহিম স্টাফ রিপোর্টার সিলেট।
স্কুল কলেজ খোলার সংবাদে সারাদেশের ন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়ও চলছে স্কুল কলেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। অভিভাবকদের মাঝে ফিরেছে প্রাণ, অভিভাবকদের মতো উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরাও আনন্দে আবেগ প্লুত।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এজন্য সারাদেশের ন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।
দীর্ঘ করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে গিয়েছিল বিশ্ব পৃথিবী ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস এর অদৃশ্য অশুভ শক্তি চুরমার করে দিয়েছে অনেকের জীবনের হিসাব নিকাশ, বাদ যায়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের করালগ্রাসে সবচাইতে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের। দীর্ঘ করোনাভাইরাসে দিগুণ হয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের সংখ্যা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে এর প্রভাব টা বেশি পড়েছে আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কতদিন সময় লাগবে তা অনেক বড় সড়ো হিসাব-নিকাশের ব্যাপার।
১২ই সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পালন করতে হবে বিশেষ কিছু শর্ত।আবার খোলার পর এসব শর্ত ঠিক মতো পালিত হচ্ছে কিনা বা স্কুল খোলার পর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে কর্তৃপক্ষ।প্রতিটি স্কুলের ওপর প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট দেয়া হবে। যেখানে পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ নেই সেখানে বিকল্প দিনে ক্লাস হবে। তিনটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে – তাপমাত্রা পরীক্ষা করে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের ব্যবস্থা করা, প্রবেশের পর স্বাস্থ্যবিধি মানা বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মণি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এবার খুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু স্কুল-কলেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে , প্রতিটি স্কুল ও কলেজ চালুর সিদ্ধান্তের পরেই পরিষ্কার,পরিচ্ছন্নতা ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো। ব্যস্ততা বেড়েছে শিক্ষক ও কর্মচারিদের মধ্যে। স্কুল কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত উপজেলার বেশকয়েকটি বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নিজেদের ফেইসবুক টাইমলাইনে পোষ্ট করছেন। শিক্ষার্থীদের মনে বিরাজ করছে আনন্দ। স্কুল কলেজ খোলার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উচ্ছ্বসিত। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে সব মিলিয়ে সত্যিই এক আনন্দ মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে।
সরেজমিনে অনেক স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিল ও মেঝে ধোয়া-মুছার কাজের ব্যস্ততার পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিততে সরগরম হয়ে ওঠেছে স্কুল-কলেজ গুলো। ডি এন হাই স্কুল এন্ড কলেজে আসা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিরার অভিভাবক নাছির উদ্দীন জানান,স্কুল-কলেজ খুলবে জেনে সত্যিই আনন্দিত। দীর্ঘদিন থেকে ঘরবন্দী বাচ্চারা এবার একঘেয়েমি থেকে বের হতে পারবে। দীর্ঘ দেড় বছর বাচ্চারা ঘরে বন্দী থাকার কারনে পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়ায় তারা এখন অচল হয়ে গেছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার কথা শুনে খুবই ভালো লাগছে। আবার শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে তাদের শিক্ষার আলো। ধন্যবাদ জানাই শিক্ষা মন্ত্রীকে।
ডি এন হাই স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাদিরা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায় তার মনের কথা, স্কুল খুলছে শুনে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। আনন্দে আমি লাফালাফি করতেছি। কেননা দীর্ঘ দেড় বছর বিশ্বে মহামারী কোভিড-১৯ (করোনার) কারণে আমরা ঘরে বন্দি ছিলাম। ১২সেপ্টেম্বর স্কুল খুলছে শুনে বই খাতা নিয়ে রেডি হয়ে গেছি। আবার আমরা স্কুলে যাব বলে। ফিরে পাবো শিক্ষার আলো। পাব অতীতের স্কুল জীবন। তাই আনন্দে কাটছে আমাদের দিন। এখন শুধু ১২সেপ্টেম্বর এর অপেক্ষায়।
এদিকে শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নে র কাজে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায় ডি এন হাই স্কুল এন্ড কলেজের কর্মচারি আমিনাকে। তিনি জানান, অনেকদিন পর স্কুল খুলতে যাওয়ায় কাজ করতে মনে আনন্দ লাগছে। আবার দেখা হবে শিক্ষার্থীদের সাথে সেই আনন্দে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করছি।
এ ব্যাপারে ডি এন হাই স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী জানান, স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা সত্যিই আনন্দের ও খুশির সংবাদ। আমাদের বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষ গুলো ইতিমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা রাখতে সরকারের বিধি-নিষেধগুলো পুরোপুরি পালনে বিদ্যালয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, ইতিমধ্যে ৪ জনের একটি টিম গঠন করে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শিশুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া ২-৩ দিনের মধ্যে সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে আরও সচেতনতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
Leave a Reply