হাকিকুল ইসলাম খোকন ,সিনিয়র প্রতিনিধি:
“চিকিৎসা সেবা সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার, কারো দয়া নয়” পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে করোনা রোগীদের বাঁচার হাহাকার। এই হাহাকার শুধু মাত্র জীবন বাঁচানোর, চিকিৎসা সেবা পাবার অধিকারের হাহাকার। চট্টগ্রাম দেশের বানিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শিল্প-বন্দর নগরী হলেও আধুনিক সরকারি-বেসরকারী কোন চিকিৎসা সেবা গড়ে উঠেনি। ফলে করোনা মহামারী কালে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত আইসিএইউ-এইচডিইউ সুবিধা গড়ে উঠেনি, অক্সিজেন সরবরাহ ও শয্যা সংকট প্রকট। বিগত কয়েকদিন ধরেই দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু চট্টগ্রামে মৃত্যুপুরিতে পরিণত হলেও পর্যাপ্ত পর্য্যা সংকটে রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মরছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগসহ কারও কাছে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের খালি শয্যার কোন প্রকৃত তথ্য না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে বিভাগীয় কমিশনার অফিস কর্তৃক গঠিত তদারকি কমিটিও কার্যকর নাই। তাই পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে শুরু হয়েছে শুধু নিঃশ্বাস নেবার অভিপ্রায়। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের সকল সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে করোনাসহ সাধারন রোগী ভর্তি করতে দ্রæত শয্যা সংখ্যা বাড়ানো ও করোনাসহ সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ও বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু বন্ধের জন্য মানবিক আবেদন জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ। খবর বাপসনিঊজ।০৭ আগষ্ঠ ২০২১ চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধির সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক ডাঃ মেজবাহ উদ্দীন তুহিন, তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস উপরোক্ত দাবি জানান। বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুেত সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগ, তারপরও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি শয্যা ও আনুসাংগিক সুবিধা না বাড়িয়ে মানুষকে মৃত্যুরদিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবার বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। আবার অনেক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক একদিকে সরকারি চিকিৎসক অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। কিছু চিকিৎসকদের দ্বৈত ভূমিকার কারণে মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না, আবার বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েও সেখানেও জিম্মি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে সকল রোগীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিলেও স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকেরা তা আমলে নেননি। ফলে পুরো চট্টগ্রাম নগর জুড়ে চিকিৎসা সেবার জন্য হাহাকার।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন ক্লিনিকে সেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি, হয়রানি, সেবা না পাওয়া, লাগামহীন ও গলাকাটা সেবা মূল্য আদায়, স্বাস্থ্য সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে নজরদারির অভাব ইত্যাদি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলির নিত্যদিনকার চিত্র হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়নি। জেলা-উপজেলা হাসপাতালে রোগীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে একটি অকার্যকর উপদেষ্টা কমিটি থাকলেও বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলির সেবার মান ও রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে ঢাকায় অধিদপ্তর ছাড়া স্থানীয় ভাবে কোন তদারকির কোন ব্যবস্থা নাই। আবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস বেসরকারী হাসপাতালগুলিতে রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে তদারকি কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করা না হলেও এটি অকার্যকর। ফলে কিছু সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক এবং বিএমএর নেতারাই মিলে তাদের মতো করেই রোগীদের ভোগান্তি তদারকি করার মতো কাগুজে কমিটি। প্রকৃতপক্ষেই যার কোন ফলাফল নেই।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে করোনা ও সাধারন রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারী ক্লিনিক গুলিকে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন, ভোগান্তি নিরসন কমিটিকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করে তার ফলাফল নগরবাসীকে দৈনিক অবহিতকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবার সাথে জড়িত সকল পক্ষের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহনমলক জনঅংশগ্রহনমুলক স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়ন করা, সেবা কর্মকান্ডকে নাগরিক পরীবিক্ষনের আওতায় আনা, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর জনগনের আস্থা ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশীয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা বাধ্যতামূলক দাবি জানানো হয়।