চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিবারতন্ত্র, স্বৈরশাসন ও ভোটবিহীন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে চট্টগ্রামের বৈষম্যের শিকার বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে রবিবার (২৫ আগষ্ট) সকাল ১১ টায় নগরীর আগ্রাবাদের চেম্বার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্র ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আনার দাবি জানান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় তাঁরা চেম্বারে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানান। চট্টগ্রাম চেম্বারে গত পাঁচটি নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি।
চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যাবসায়ী ফোরামের আহবায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় এতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের ৩৬ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যোগ দেন।
এসময় সংগঠনের আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কোনো পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু বিগত কমিটিগুলো এটিকে পারিবারিক সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনে ব্যবসায়ীদের সুযোগ না দিয়ে ছেলে মেয়ে জামাতাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আসল ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাননি। ঐতিহ্যবাহী চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সকে ১৭ বছর ধরে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে। স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরা চাই, ব্যবসাবান্ধব চিটাগাং চেম্বারের ভূমিকা নিশ্চিত করতে নতুন কমিটি গঠনের করা হোক।
চেম্বারকে সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেনি। তাই ভোটবিহীন নির্বাচিত বর্তমান চেম্বার পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। চেম্বারকে সংস্কার করতে হবে। পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চিটাগাং চেম্বার ব্যবসায়ীদের কথা বলতে পারেনি। তাদের বলয়ের বাইরের কারোর চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই এবার সম্মান থাকতে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
বিজিএপিএমইএ পরিচালক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাবেক দুই সভাপতি এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এর ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই সাবেক দুই সভাপতির কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে হবে।
সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু বলেন, পরিবারতন্ত্রের কারণে চেম্বারের অনেক কর্মচারীর চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপি জামায়াত ট্যাগ দিয়ে অনেককে বিনা কারণে চেম্বার থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান বলেন, যারা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আছেন তারাই চেম্বারের সদস্য হবেন এবং নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। মেম্বারশিপ সহজীকরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছেন। তিনি ওমর হাজ্জাজসহ পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
বন্দর ট্রাক কাভার ভ্যান মালিক এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল বলেন, আজ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা নির্যাতিত অবহেলিত ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়েছি।পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়ে কথা বলতে পারেনি।
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, চেম্বারের বর্তমান সদস্য তালিকা যাচাই করে সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পকেট ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে একটি সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করে দক্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, বিজিএমইএ'র পরিচালক আবছার হোসেন, সদস্য সাইফুল ইসলাম, এস এম হক, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু, সুলতানা ট্রেডার্সের রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী, বার্থ অপারেটর মশিয়ুল আলম স্বপন, ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান, ব্রিকস এসোসিয়েশনের জাহাঙ্গীর আলম, বন্দর ট্রাক কাভার ভ্যান মালিক ও কন্ট্রাকটার এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল, রিয়াজুদ্দিন বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ছালামত আলী, এছাক ব্রাদার্স কনটেইনার ডিপোর এমডি মো. জুয়েল, কাভার ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুল হক, বারভিডার সদস্য জসিম উদ্দিন ফিরোজ, জাহাঙ্গীর আলম, বিজিএপিএমইএ পরিচালক বেলাল হোসেন, টায়ার টিউব মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, রিকন্ডিশন মোটর পার্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল আলম, ফ্রেইড ফরোয়ার্ড এসোসিয়েশনের সদস্য মান্নান পাটোয়ারী, গার্মেন্টস এক্সোসরিস ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশনের পরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ সোহেল, বন্দর মেরিন কন্ট্রাকটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দোস্ত মোহাম্মদ, মেট্রোপলিটন সপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন ব্যাবসায়ী নেতা বাদশা মিয়া, ফাতেমা বাদশা, ইউনুস চৌধুরী হাকিম, হাজী আবু ফয়েজ, এস এম ফরিদুল আলম, মনিরুজ্জামান টিটু, নুরুদ্দিন সোহেল, একে ফজলুল হক চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, মোরশেদুল আলম চৌধুরী, মহিউদ্দিন, ইমরুল হাসান চৌধুরী, আরিফ হোসেন, মুস্তাক আহমেদ, আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাসনাত, মনিরুল ইসলাম, মেজবাহউদ্দিন মানিক প্রমূখ।