চবির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক
মোঃ আবু তৈয়ব. (হাটহাজারী) চট্রগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে চবির প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া চবি কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো আরেক চিঠিতে প্রকৌশলী এম আলী আশরাফসহ চারজনকে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট আর কোনো দরপত্র মূল্যায়নের সদস্য না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (অনু: ও তদন্ত-৫) মো. আনোয়ারুল হকের স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। যেখানে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবন (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুদক অনুসন্ধান চালায়। এতে বর্ণিত প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রাপ্তিতে প্রতারণা, জালিয়াতি ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। সে পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জিকেবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম) ও দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স
অ্যাসোসিয়েটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২।
চিঠিতে আরও উল্লেখ আছে, ওই অনুসন্ধানে দরপত্র মূল্যায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ হোসেন, প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার-১ মো. মাহাবুব আলম ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোল্যা খালেদ হোসেনের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা ও অদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে বর্ণিত ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
দুদকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আমরা চবির ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও জালিয়াতির যতটুকু অনুসন্ধান করেছি, ততটুকুতে যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে। আরও যাদের সংশ্লিষ্টতা পাব তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুদক পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-৫) মুহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত অন্য আরেক চিঠিতে বলা হয়, চবির দ্বিতীয় কলা ভবন নির্মাণে জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনিয়ম উদঘাটনের পাশাপাশি দরপত্র মূল্যায়নে স্ট্রাকসেল কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্সের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, প্রকৌশলী উদয় শেখর দত্ত, মো. নূর আহমদ ও মো. ইসহাকের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়নের কাজে ওই ব্যক্তিদের সদস্য না করার জন্য চবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই চারজনই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম মনিরুল হাসান বলেন, আমরা দুদক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্দেশনা পেয়েছি। দুদক তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে তা দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম) ও তার সহযোগী ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপনকে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। জিকে শামীম পুলিশের হাতে আটক থাকলেও পলাতক রয়েছেন ফজলুল করিম স্বপন। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক আমাদের সময়। সংবাদ আমলে নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করলে প্রত্যেকটি অভিযোগের সন্দেহাতীত প্রমাণ পায়। ফলে গত বছর ২২ নভেম্বর জিকে শামীম ও তার সহযোগী ফজলুল করিম চৌধুরী বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে দুদক।