জিহাদ হোসেন রাহাত
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে এবারও ডাবের বাম্পার ফলন হয়েছে। ডাব কেনা-বেচায় এখন দারুণ সরগরম লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার।
রায়পুর উপজেলার উপশহর হায়দারগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীপুর জেলার সবচেয়ে বড় ডাব ও নারিকেলের আড়ৎ। প্রতি পিস ডাব ২১-৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে শত কোটি টাকার ডাব বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তবে স্থানীয় ভাবে নারকেল ভিত্তিক কল কারখানা গড়ে না উঠায় ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ডাবের নায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় দুই হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে নারিকেল বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৫১০ হেক্টর, কমলনগরে ৩৫০ হেক্টর, রায়পুরে ৩৬৫ হেক্টর ও রামগতিতে ১৬০ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে পাঁচ কোটি পিসেরও বেশি ডা বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে যার বাজার দর শত কোটি টাকার বেশি।
জেলায় ডাবের প্রধান মোকামগুলো হলো সদর উপজেলার দালাল বাজার, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ শহর, কমলনগর হাজির হাট, রামগতির আলেকজান্ডার। এসব বাজারে এখন কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে ডাবের পাইকারসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
এখানকার ডাব ঢাকা, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, ভৈরব, খুলনা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
হায়দারগঞ্জের ব্যবসায়ী তাওসিন হাওলাদার জানান, নারিকেলের চারা গাছ রোপণের সময় প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়। প্রতিটি গাছ ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতি গাছে বছরে ২০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত ডাব পাওয়া যায়।
চন্দ্রগঞ্জ বাজারের নারিকেলের পাইকার কামাল হোসেন জানান, তিনি এ মৌসুমে ১৯-২১ টাকা মূল্যে এক কোটি টাকার ডাব কিনেছেন। বর্তমানে মৌসুমের শুরু। তবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর ডাবের দাম বাড়তে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডাবের ফলন ভালো হওয়ায় ও তীব্র পরিমাণ গরম পড়ায় ডাব কাটা হয়েছে বেশি। তবে ডাবের কারণে নারিকেলের ফলন কম হয়েছে। নারিকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষীরা নায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সে জন্য এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভিয়েতানামের নারিকেলের প্রতি আগ্রহের কারণে চাষীরা সে দিকে ঝুঁকছেন। বড় গাছের চেয়ে ছোট গাছের ফলনের প্রতি নজর বেশি তাদের। আমরাও চাহিদামতো সরবারহের চেষ্টা করছি। এছাড়াও নারিকেলের ছোবড়া বেশ চাহিদাসম্পন্ন। তাই গোডাউন, ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।