সামাউন আলী,
সিংড়া (নাটোর)প্রতিনিধিঃ
কথিত আছে, ছোট পুত বড় হলে কি করবে মায়ে, আর বর্ষা শুকিয়ে গেলে কি করবে নায়ে!
শুষ্ক মৌসুমে নৌকার কদর না থাকলেও বর্ষা আসতে না আসতেই এর চাহিদা যেন বেড়ে যায় শতগুন। বিশেষ করে চলনবিল অঞ্চলের মানুষের কাছে নৌকা যেন মৌলিক চাহিদার একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায় বর্ষাকালে। তাই এই চলনবিল অঞ্চলের জনসাধারণের একটি প্রচলিত কথা, শুকনায় পাও, আর বর্ষায় নাও!এই অঞ্চলের মানুষের শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন উপায়ে যাতায়াত ব্যবস্হা থাকলেও বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যেন কোথায়ও যাওয়ার কোন উপায় নেই এই অঞ্চলের জনসাধারণের।
শ্রাবণ মাস প্রায় শেষের দিকে, চলনবিলে সময়মত বন্যা না হলেও নৌকা তৈরির হিড়িক থামেনি, বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতির কারনে আগে থেকেই কারিগররা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলনবিলের মানুষদের আত্ম বিশ্বাস দু'দিন আগে পরে বন্যা হবেই, তখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হবে নৌকা। তাই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই চলছে তাদের নানান প্রস্তুতি। বন্যার পানি আসলেই বিল ডুবে যায় এবং চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। বিলের রং পরিবর্তন হয়ে রূপালি রুপ ধারণ করে। তখন রুপালি পানির সাথে নানার প্রজাতির রূপালি মাছের আগমন ঘটে।
এ সময়ে চলনবিলের হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা, নৌকা চড়ে সকাল বিকাল জাল
দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ কেউ আবার নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়ে শহর এবং গ্রামের মানুষদের মালামাল বহন করে, তাতে যথেষ্ট অর্থ আয় হয়। এ ভাবে দুই তিন মাস তাদের দিন আনন্দেই কাটে।
চলনবিল অঞ্চলের মানুষের নৌকার চাহিদা অনেক বেশি। কাঠ ও মান ভেদে বর্তমানে ১১ হাত একটি ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি হতো চার হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতি বছরই দামের এ সীমা উঠা নামা করে পানির মাত্রার সাথে। পানি যদি হু হু করে বেড়ে যায় নৌকার চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক গুন। সঙ্গে সঙ্গে নৌকার দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেড়ে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক নৌকার কারিগর বেশ লাভবান হন। কিন্তু বিধি যদি বাম হয় তখন লাভের বদলে তাদের কষতে হয় লোকসানের হিসাব। হঠাৎ পানি বেশি হলে অনেক মিস্ত্রি তাদের অন্যান্য কাজ গচ্ছিত রেখে ধারদেনা করে কাঠ কিনে শুরু করেন নৌকা তৈরীর ব্যবসা। তবে এবছর তার ব্যতিক্রম, এইবার বন্যা প্রবনতা কম বলে নৌকার তেমন চাহিদা নেই, তাই কারিগররা সীমিত পরিসরে কিছু কাঠ ক্রয় করে নৌকা তৈরীর কাজ করেছেন৷ তবে বন্যার প্রবনতা কম বলে থেমে নেই কারিগররা, তারা তাদের কর্ম অব্যাহত রেখেছেন।
চলনবিল অঞ্চলের নৌকার কারিগর সুব্রত কুমার বলেন, তিনি মূলত একজন নৌকার কারিগর। কিন্তু এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় তিনি নিজ মূলধন খাটিয়ে এ কাজ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। এখন তিনি রোজ হিসেবে অন্যের নৌকা তৈরী করে দেন। এতে তার আয় কম হলেও ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকান্দী গ্রামের ফজেল মিস্ত্রী বলেন, এ বছর একটু আগে আগেই নৌকা তৈরী শুরু করে দিয়েছি। তবে এবার বন্যার প্রবনতা কম হওয়ার কারনে নৌকার চাহিদা অনেকটা কম।কাঠ, লোহা ও মজুরি খরচ বাদে নৌকা প্রতি ৫০০ টাকার মত লাভ হচ্ছে, বন্যা যদি বাড়ে তবে নৌকার দাম ও আরেকটু বাড়তে পারে।