রাব্বী আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥কুষ্টিয়া জেলা থেকে এবার বোরো মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর মিল মালিকদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি করেছে। ১৮৫ মিল মালিক চুক্তি করেছেন চাল সরবরাহের। ৭ জুন শুরু হয় চাল কেনা কার্যক্রম। প্রতি কেজি চাল ৪৪ টাকা দরে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কিনবে খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সরকারি বিধি না মেনে কুষ্টিয়ায় বোরো সংগ্রহ অভিযানে অতিরিক্ত বরাদ্দের পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল এক আওয়ামীলীগ নেতা ওমর ফারুক ও তাঁর ভাইয়ের নিয়ন্ত্রিত নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে একই শর্ত পূরণ করার পরও আরও ১৯ মিল মালিককে এ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
মিলমালিক ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনা হবে এ জেলা থেকে। ১৮৫ মিলমালিকের মধ্যে পাক্ষিক উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দ করা হয়। যে সব মিলমালিক যথাসময়ে চুক্তি করা সমুদয় চাল সরবরাহ করবেন, তাঁদের অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম আছে। সেই শর্ত পূরণ করে জুন মাসের মধ্যে ২৮ অটো রাইস মিলমালিক অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। তবে ৩ জুলাই খুলনা অফিস থেকে পাঠানো চিঠিতে ৯ মিল মালিকের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার সকাল ১১টার সময় বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১৫ জন নেতা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে তাঁদের বাগবিতণ্ডাও হয়। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে রবিবারের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
চাল সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে, সেগুলো হলো সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুকের মালিকানাধীন ফ্রেশ অ্যাগ্রো লিমিটেড, ওয়াদি অটো রাইস মিল, ওমর ফারুকের ভাই হযরত আলীর প্রতিষ্ঠান প্রগতি অটো রাইস মিল, ওমরের আরেক ভাই জামসের আলীর প্রতিষ্ঠান শামীম অ্যাগ্রো ফুড, আরেক ভাই মজিবর রহমানের মালিকানাধীন প্রভাতী অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস এবং তাঁদের আত্বীয় ও ব্যবসায়িক সহযোগী সুবর্ণা অটো ফুড-১, মা ভান্ডারি অটো রাইস মিল, গুরুর দান অ্যাগ্রো ফুড ও তানিয়া অটো রাইস মিল। সবচেয়ে বেশী বরাদ্দের ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ওমর ফারুকের দুটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন এবং তাঁর অন্য তিন ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। আর বাকি চাল সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে তাঁদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো। বঞ্চিত মিলারদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক প্রভাব খাটিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাদের ‘কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করে’ তাঁদের নয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ করিয়েছেন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, সাধারণ মিলমালিকেরা খুবই ক্ষুব্ধ। অতীতেও এমন হয়েছিল তখন জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়েছিল। এবার মাত্র নয়জন পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে চার ভাইয়ের পাঁচটি মিল। বাকি চারটিও তাঁদের অনুসারী। মিল মালিক লিয়াকত আলী বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে পাঁচ হাজার টনের বেশি চাল নয়জনকে দেওয়া হয়েছে। আমরা শর্ত পূরণ করে আবেদন করেও চাল পাইনি। অসৎ উদ্দেশ্যে খাদ্যে বিভাগের লোকজন এ কাজ করেছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মিল মালিক ওমর ফারুক বলেন, আবেদন করার পর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে এখনো কোনো অনিয়ম হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, ২৮ মিল মালিক আমার কাছে বিভিন্ন সময় আবেদন করেছিলেন। প্রত্যেকের আবেদন আমি খুলনায় আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। এগুলোর মধ্য থেকে মাত্র নয়জনকে বরাদ্দ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এ নিয়ে অন্য সকল মিল মালিকেরা আমার কাছে এসেছিল।
Leave a Reply