চিম্বুকে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণকারীদের কর্তৃক ম্রোদের হত্যার হুমকি
আকাশ মার্মা মংসিং বান্দরবানঃ
বান্দরবান জেলার চিম্বুক পাহাড়ের বুকে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণস্থলে অবস্থানকারী সেনাসদস্যদের কর্তৃক দলাপাড়ার আদিবাসী ম্রোদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ও বনে ঝাড়ু কাটতে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি ২০২১ টানা দুইদিন এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি ২০২১ দলাপাড়ার আদিবাসী ম্রোরা নাইতং পাহাড়ে তাদের ভোগদখলীয় জায়গায় ফুল ঝাড়ু কাটতে গেলে সেখানে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের কাজে আগে থেকে নিয়োজিত থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা ও তাড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ৬ জানুয়ারি ২০২১ সকালের দিকে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে ফুল ঝাড়ু কাটতে যায়। যথারীতি এদিনও তাদেরকে বাঁধা দেওয়া হয়। সেখানে সাদা পোশাকে অবস্থানরত সেনা সদস্য ও সিকদার গ্রুপের লোকেরা লাঠি দিয়ে কয়েকজন ম্রো গ্রামবাসীকে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় গ্রামবাসীরা মিলে প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়।
দলাপাড়াবাসী তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে ম্রোরা প্রতিবাদ করে বলছে, আমাদের জমি, আমাদের ভূমি, আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করছি। আমরা এখানেই মরব। এখানে আমাদের করব স্থান। জন্ম-মৃত্যু সবকিছু এখানে আমাদের। মৃত্যু নিয়ে পরোয়া করি না। বাঁচলে একসাথে বাঁচতে চাই। মরলে এক সাথে মরতে চাই।
এসময় সাদা পোশাকের সেনাবাহিনীর এক সদস্য বলছে, তোমার পাছা দিয়ে ভূমি এক্কেবারে ঢুকাই দিমু, জন্ম-মৃত্যু এখানে আজকে হবে।
ঘটনার পর সেনা কল্যাণ সংস্থা ও সিকদার গ্রুপ এর লোকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে ভবিষ্যতে এব্যাপারে কোন ধরনের প্রতিবাদ না করার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল স্তরের জুম্ম জনগণসহ দেশের ৬২ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে ম্রোদের উচ্ছেদ করে এই ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হলেও সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপ এখনও তাদের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী জনগণ, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও মানিবাধিকার সংগঠনসমূহের দাবির প্রতি সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপ এখনও পর্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করেনি। উল্টো স্থানীয় আদিবাসী ম্রোদের চলাচলে বাধা এবং প্রতিবাদে চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে চলেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চিম্বুক-থানচি সড়কে ম্রো অধ্যুষিত কাপ্রু পাড়া, দোলা পাড়া ও শোং নাম হুং এলাকায় সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন ‘আর অ্যান্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস’ নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার একর জমি ব্যবহার করে এই পাঁচ তারা হোটেল ও অ্যামিউজমেন্ট পার্ক করা হবে। এই স্থাপনার প্রয়োজনে ইতোমধ্যে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে। যার একটি বিশাল এলাকাজুড়ে আছে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মৌজা বন, জুম পাহাড়, পাড়া, বনজ ও ফলজ বাগান, শ্মশান, পাহাড়, বন ও পানির উৎস। এতে একইভাবে মার্কিনপাড়া, লংবাইতংপাড়া, মেনসিংপাড়া, রিয়ামানাইপাড়া ও মেনরিংপাড়া উচ্ছেদের মুখে পড়বে।