মোঃ-আলমগীর হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গার জেলার জীবননগর উপজেলার টিন ব্যবসায়ী মেসার্স হক মেশিনারি"র সত্বাধিকারী হাজী সাইদুল হক ও তার ছোট ভাই সাইউল হক তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের কর্মচারির খলিল মিজির(৫৫) বিরুদ্ধে দু"হাজার টাকা চুরির অভিযোগ তুলে তাকে নির্মম ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আহত করে।
রবিবার ১ নভেম্বর দুপুরে তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আটকিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতনের পর ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারবে না শর্তে খলিল মিজিকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু সোমবার ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সাইদুল হককে(৫৫) গ্রেফতার করেন।
জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পিয়ারাতলা গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে খলিল মিজি (৫৫)বলেন, আমি দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে জীবননগর বাজারের টিন ব্যবসায়ী হাজী সাইদুল হকের মেসার্স হক মেশিনারী নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসাবে কাজ করে আসছি। প্রতিদিনের মতো রবিবার সকালে আমি দোকানে গিয়ে খাতা- পত্র নিয়ে হিসাব নিকাসের কাজ করতে থাকি।
ওই সময় হঠাৎ দোকান মালিক হাজী সাইদুল হক ও তার ছোট ভাই সাইউল হক সেখানে যান এবং আমাকে মার্কেট থেকে বাকী আদায় করা টাকা থেকে দু" হাজার টাকা কম হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। আমি তাদেরকে বলি আমার পাওনা বেতন বাবদ ৫০০ টাকা নিয়ে আমার নামে খাতায় লিখে রেখেছি। কিন্তু তারা আমাকে চাপ দিয়ে বলে দু"হাজার টাকা কম হচ্ছে। আমি বলি কি কারনে কম হবে তা জানতে হলে যে টাকা আদায় করে তার নিকট জানতে হবে।
এতে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। আমাকে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আটকিয়ে তারা দু"ভাই পর্যায়ক্রমে দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন দফায় মারপিট করে এবং আমি দু"হাজার টাকা চুরি করেছি বলে স্বীকার করতে বলে। তাদের অমানসিক নির্যাতনে এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার স্ত্রীকে তারা খবর দিয়ে সেখানে নিয়ে বলে এই ঘটনা কোথায়ও বলতে পারবো না শর্ত দিয়ে আমাকে ভ্যান যোগে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।
আমি কলেজ পড়ুয়া কন্যার কথা চিন্তা করে লজ্জা-শরমে এবং দোকান মালিক সাইদুল হকদের ভয়ে ঘটনাটি কাউকে না জানিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসা নিতে থাকি। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় আমার অবস্থা খারাপ হলে পরিবারের লোকজন জীবননগর হাসপাতাণে ভর্তি করে।
আমাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি যদি চোর হতাম তাহলে ৩০ বছর ধরে মানুষের দোকানে ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে পারতাম না।
হক মেশিনারীতেও দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কাজ করে আসছি। চুরি করলে দু"হাজার টাকা করব কি জন্য।
প্রত্যক্ষদর্শী জামাল হোসেন,মাত্র দু"হাজার টাকা চুরির অপরাধে এমন নির্মম নির্যাতন জীবননগর বাজারে এর আগে কখনও ঘটেনি।
জীবননগর থানা অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন,ঘটনা শোনা মাত্র পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে ভিকটিমকে দেখার জন্য পাঠায়। ঘটনাটি খুবই নির্মম ও নিষ্ঠুর। এ ঘটনায় জড়িত ব্যবসায়ী সাইদুল হককে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে গ্রেফতার করি।