সোহেল মিয়া, (সুনামগঞ্জ) থেকে :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীতে সম্প্রতি ড্রেজিং পদ্ধতিতে চালু হয়েছে বালু উত্তোলন। এতে ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন নদীর উভয় তীরের ফসলি জমি, জনবসতি, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মেঘালয় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা ওই নদীর কূলঘেঁষা পূর্ব চাইরগাঁও এলাকার ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থাপনা ইতোপূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কিন্তু চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমে নতুনভাবে আবিষ্কৃত রাক্ষুসে যন্ত্রদানবের (ড্রেজিং মেশিন)ভয়াল থাবায় ভাঙনের তীব্রতায় ফসলি জমিসহ বাস্তুভিটা হারিয়ে নি:স্ব হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
নদী ভাঙ্গন পরিদর্শন করেন দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মাষ্টার মতক্কিন আলী ও নুরুল আমিন এসময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আঃ আলিম,মোঃ নুরু মিয়া, হুশিয়ার আলী, সিরাজ মিয়া, আনফর আলী সহ এলাকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ২নং নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীর ভাঙনে গেল বছর ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। চেলা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় সৃষ্ট ভয়াবহ ভাঙনে কপাল পুড়ছে নদীপাড়ের অসংখ্য পরিবারের। অপরদিকে, কপাল খুলছে কতিপয় প্রভাবশালী রাঘব বোয়ালের। এতে জড়িত রয়েছেন এলাকার একশ্রেণীর বিত্তবান প্রভাবশালীরা। ব্যবসার নামে বালুমহাল ইজারা এনে বেপরোয়া দাপট খাটিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন তারা। ফলে স্থানীয় চাইরগাঁও ক্যাম্পের বাজার, নাছিমপুর বাজার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ শতাধিক পরিবারের সর্বস্ব নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন অভিজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য, দুই বছর পূর্বে নদীর ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এলাকার হাজারো মানুষ মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করায় গেল বছর ওই নদীর ইজারা প্রদান বন্ধ ছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চলিত বছরে আবারও নদীর বালুমহল ইজারা দেওয়ায় হুমকিতে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
গত বছর নদী ভাঙ্গনে এই এলাকার কয়েকটি বসতভিটা, বর্ডারগার্ড বিজিবির ২ টি টহল পোষ্ট ও কয়েক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও কয়েকটি ঘর বিলীন হওয়ার পথে। আরো প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা নদী ভাঙ্গন কবলের শিকারের মধ্যে আছে সে সকল অংশের মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে এই ড্রেজিং বন্ধ না করলে এবছরেই চেলা নদীর তীরে অবস্থিত গ্রাম গুলির অস্তিত্বই পাওয়া যাবেনা। হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে কয়েকটি গ্রাম। নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়া অসহায় পরিবারগুলো তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। জরুরী ভিত্তিতে এই ইজারা বন্ধ করা ও তাদের কষ্টের জীবন যাপনের চিত্র তুলে ধরে গ্রাম গুলি রক্ষায় সরকারের আশু পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আকুল আবেদন জানান তারা। এসময় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বহুল আলোচিত স্থানীয় চেলা নদীর ভাঙনরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।