জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, সুশীল সমাজের ক্ষোভ
নাশকতা, বিস্ফোরক ও মাদকের ৫ মামলার আসামীর প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তাদের সাথে ফটোশেসন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কাচারীপাড়ার বিএনপি নেতা, সাবেক ট্রাক ড্রাইভার সাংবাদিকতার লেবাস পরে কুষ্টিয়ায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে ফটোসেশন করে তা স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচার করছেন। ঐ বিএনপি নেতার নাম জাহাঙ্গীর খান। সে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার কাচারীপাড়া এলাকার মৃত আকমল খা’র ছেলে। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সুশীল সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ঐ বিএনপি নেতার নামে বিভিন্ন সময় ভেড়ামারা থানায় ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। সে চিহ্নিত একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারী বিরোধী কার্যকলাপে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা আছে। এই বিএনপি নেতা খোলস পাল্টে সাংবাদিকতার বেশ ধারন করেন নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কুখ্যাত এই বিএনপি নেতার নামে মামলাগুলো হলো, ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নাশকতার অভিযোগে ভেড়ামারা থানায় করা মামলা। মামলা নং-১১। ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভেড়ামারা থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলা। মামলা নং-১। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ভেড়ামারা থানায় দায়ের করা মারামারির মামলা। মামলা নং-১৪, ২০১৫ সালের ৫ জুলাই ভেড়ামারা থানায় দায়ের করা মাদক মামলা। মামলা নং-৩। ২০১৩ সালের ১ মে ভেড়ামারা থানায় দায়ের করা মাদক মামলা। মামলা নং- ১।
ভেড়ামারার কাচারীপাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর খান বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। মামলা থেকে রেহাই পেতে খোলস পাল্টে এখন সাংবাদিক পরিচয় ধারন করেছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন সরকার বিরোধী ও অসত্য সংবাদ বা সংবাদের তথ্য প্রচার করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক আছে এই বিষয়টি সাধারণ মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য ফায়দা হাসিল করা। আর এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছে কুষ্টিয়ার কথিত এক সাংবাদিক। মূল ধারার গণমাধ্যম থেকে বিছিন্ন এই কথিত সাংবাদিক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এসব মাদক মাদক মামলার আসামী, নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলার আসামীদের ব্যবহার করছে।
সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে সাবেক জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ভেড়ামারা উপজেলার এই নেতা তার স্ত্রীকে একাধিকবার ভেড়ামারা পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত করিয়েছেন । যদিও গত পৌর নির্বাচনে তার স্ত্রী রুমা খাঁন বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
জাহাঙ্গীর খাঁন পড়ালেখা না জানলেও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ফায়দা লুটছেন দীর্ঘদিন ধরে । সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করতে তিনি তার নিজের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস কেউ সাংবাদিকতা পেশায় নিয়ে এসেছেন। যদিও এই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
একজন সাংবাদিকের নামে কিভাবে এতোগুলো মামলা সেটা নিয়ে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে রয়েছে খুবই বাজে প্রতিক্রিয়া। তারা আরোও স্পর্শকাতর কিছু তথ্য জানিয়েছেন যা গণমাধ্যমে প্রকাশ যোগ্য নয়।
বিএনপি'র সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল নেতা ব-কলমের জাহাঙ্গীরকে সাংবাদিক হতে দেখে এলাকাবাসী অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। এলাকাবাসী মনে করেন, সাংবাদিককতার মত এই মহৎ পেশায় জাহাঙ্গীর খাঁনের মতো সার্টিফিকেট বিহীন, মাদক, বিস্ফোরক, নাশকতা এবং মারামারির মামলার আসামী কখনোই কাম্য নয়। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, যে ব্যক্তি নিজের সংবাদের শিরোনাম সে সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য কি সংবাদ প্রচার করবে?
এলাকার সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ মনে করেন, সময় এসেছে এই ধরনের সাংবাদিকদের বর্জন করে, তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে, সাংবাদিকতার এই মহৎ পেশাকে কলঙ্কমুক্ত করার।
মাদক, নাশকতা, বিস্ফোরক ও মারামারি মামলার আসামী প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ছবি উঠিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ভেড়ামারা সার্কেল) ইয়াছির আরাফাত জানান, আপনি যার কথা বলছেন আমি আসলে তাকে চিনতে পারিনি । যদি মামলা থাকে সেটা ভিন্ন বিষয় । সেটা দেখতে হবে এবং জেনে বলতে হবে । কখন কে কোনদিকে কিভাবে ছবি তোলে সেটা বলা মুশকিল । সব যাচাই করে সব সময় কনফার্ম করা সম্ভব হয় না ।
এই বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু বলেন, যদি এই ধরনের কোন ব্যক্তি আমাদের সাথে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে থাকে তাহলে আমাদের ভাবমূর্তি একশতভাগ ক্ষুন্ন হয় । তিনি আরো বলেন জামায়েত ও বিএনপি থেকে আগত হাইব্রিড নেতাদের কারণে এখন যারা প্রকৃত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী তারা আওয়ামী লীগ করতে পারছে না ।