জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জানুন, সতর্ক হোন
জলাতঙ্ক (ইংরেজি: Rabies) হলো ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ (অর্থাৎ এই রোগ টি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়)। রেবিজ ভাইরাস নামক একধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়।এই রোগ সাধারনত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে, মানুষ এই প্রাণী বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এই প্রাণী যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচুড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। জলাতঙ্ক রোগ এন্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই দেখা গেছে। জলাতঙ্ক রোগের জন্য প্রতি বছর বিশ্বে ২৫ থেকে ৬০ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে।
জলাতঙ্ক কীভাবে ছড়ায়?
কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, বেজি, বাদুড় ইত্যাদি র্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং আক্রান্ত প্রাণী মানুষকে কামড়ালে মানুষের এ রোগ হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মুখের লালায় র্যাবিস ভাইরাস থাকে। এ লালা পুরনো ক্ষত বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষত বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।
জলাতঙ্কের লক্ষণ কি?
সন্দেহজনক প্রাণী কামড়ানোর ৯-৯০ দিনের মাঝে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়। কারও শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উন্মত্ততা বা পাগলামো এবং মৌন আচরণ দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে, ক্ষুধামান্দ্য হবে, বিকৃত আওয়াজ করবে, বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে। এছাড়া পানির পিপাসা খুব বেড়ে যাবে, তবে পানি খেতে পারবে না। পানি দেখলেই আতঙ্কিত হবে, ভয় পাবে। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যাবে। খাবার খেতে খুবই কষ্ট হবে, খেতে পারবে না। শরীরে কাঁপুনি, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হবে। কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে পারে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা দেবে। মৌন আচরণে আক্রান্ত স্থান একটু অবশ অবশ লাগবে। শরীর নিস্তেজ হয়ে ঝিমুনি আসতে পারে। মানুষের চোখের আড়ালে থাকার প্রবণতা, শরীরে কাঁপুনি ও পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে।
জলাতঙ্কের চিকিৎসা কি?
সন্দেহভাজন প্রাণী কামড়ানো বা আঁচড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থানটি ১০-২০ মিনিট ধরে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। অতঃপর ক্লোরহেক্সিডিন বা পোভিডোন আয়োডিন দিয়ে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে ওয়াশ করতে হবে। এতে ৭০-৮০% জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। এরপর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো র্যাবিস ভ্যাক্সিন নিতে হবে, সাধারণত প্রথম দিন দেওয়ার পর ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে মোট ৫টি ডোজে ভ্যাক্সিন দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে হিউম্যান র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনও দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ভ্যাকসিন কাদের দিতে হবে?
WHO( World Health Organization) এর মতে
রোগীকে তিনটি ক্যাটাগরি তে ভাগ করা যায়।
ক্যাটাগরি -১:
যারা বলেন কুকুর পাড়া দিয়েছে,চেটেছে
লেজের বাড়ি লাগছে,কিংবা নখের খুচা লাগছে রক্ত পরে নাই,জ্বালা করে না।এসব গুলো ক্যাটাগরি -১ অন্তভুক্ত।
করনীয়: ভ্যাকসিন নেবার পয়োজন নেই। যে কোন এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করুন। অথবা সবান দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
ক্যাটাগরি -২:
যদি পশুর আঁচড়ের দাগ দেখা যায় তবে কোনো রক্তক্ষরণের ঘটনা না।কিন্তু রক্তক্ষরণ যদি ঘটে তাহলে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দিতে হয় ৫টি। পশু কামড়ানোর পরপরই টিকা নেওয়া উচিত এবং তা ৫ দিনের মধ্যে নিলে সবচেয়ে ভাল ।
ক্যাটাগরি -৩:
কামড়ে যদি রক্ত বের হয়,দাত বসিয়ে দেয় মাংস নিয়ে যায় তবে ক্যাটাগরি -৩। অথবা ক্যাটাগরি -২ সাথে যদি মাথা,গলা, বুক,কাধে হয় তবে সেটিও ক্যাটগরি -৩ এর অন্তভুক্ত হবে।
ক্যাটাগরি -৩ হলে ভ্যাকসিন + Human RIG(Rabies IG) দিতে হবে।
লেখক: ডা. মোঃ সাইফুল আলম। এম.ডি. (রুদেন ইউনিভার্সিটি) মস্কো,রাশিয়া।