খুলনা প্রতিনিধি
জামজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭২৩ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় বন্দর জেটির মেইন গেইটের সম্মুখ থেকে বের হওয়া বর্ণাঢ্য র্যালী বন্দর এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। পরে বন্দরের স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে তা শেষ হয়। সেখানে উপস্থিত সকলকে বন্দর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা। এরপর বন্দর জেটির সেডে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভার শুরুতেই কেকে কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর বন্দরের উপর নির্মিত উন্নয়নমূলক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব কালাচাঁদ সিংহ। পরে অনুষ্ঠানের সভাপতি পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ শাহীনুর আলম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, এক সময়ের লোকসানী বন্দর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেন। যার ফলে মোংলা বন্দরে এখন জাহাজ
আগমনে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক দূরদর্শিতায় অচিরেই মোংলা বন্দর শিপিং হাব এ রুপান্তর হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক চড়াই উত্তরাই পেরিয়ে আসা মোংলা বন্দর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথেই বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।মোংলা বন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বন্দরের সেরা কৃতত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকদের ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদাণ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ও সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে কয়েকজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদাণ করেন কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, ১লা ডিসেম্বর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭২তম প্রতিষ্ঠা দিবস। মোংলা বন্দর বিশ্ব ঐতিহ্যের ধারক সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত। এ বন্দর ১৯৫০ সালের ০১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই বছর ১১ ডিসেম্বর পশুর নদীর জয়মনিরগোলে ‘দি সিটি অব লিয়নস’ নামক ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙ্গরের মধ্যদিয়ে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি এ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তথা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০০১ হতে ২০০৮ অর্থ বছর পর্যন্ত এ বন্দর নানামুখী প্রতিকুলতার কারণে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। বিগত ২০০৭-২০০৮ইং অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ০৭টি জাহাজ ও সম্পূর্ণ অর্থ বছরে ৯৫টি জাহাজ আগমন করে এবং ২০০৪-২০০৫ইং অর্থ বছরে বন্দর ১১ কোটি টাকা লোকসান করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে মোংলা বন্দর উন্নয়নের জন্য সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরুত্ব প্রদাণ
করে এবং বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ শুরু করেন। ফলে ক্রমান্বয়ে মোংলা বন্দর গতিশীল হতে থাকে, যার কারণে প্রতি বছর বিদেশী জাহাজ আগমনের রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
Leave a Reply