মোঃ মিজানুর রহমান
সাভার। ঢাকা
গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।একই সময় তার স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়।অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ কান্ডের মূল হোতা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে শনিবার মধ্যরাতে ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে রাত ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।সেখানে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
গ্রেফতার মোস্তাফিজুর রহমান (৩২) বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সে মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।মোস্তাফিজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।অবশ্য ঘটনার পর মোস্তাফিজকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল।
গণধর্ষণের অন্যতম সহযোগী মামুন (৩৮) পলাতক থাকলেও মূল হোতা মোস্তাফিজকে রবিবার সকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী ও তার স্বামী সূত্রে জানা যায়, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মামুন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসা হয়।এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।এরপর তার স্ত্রীর মাধ্যমে মামুনের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলা হয়।স্বামীর কথা মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী।পরে জিনিসপত্র নিয়ে অভিযুক্ত মামুন হলের ভেতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন।এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই ভুক্তভোগীকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়।পরে সেখানে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, “মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন।তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে আসা জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন।আমি জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসি।তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান।মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলে জানান।”
ভুক্তভোগী বলেন “এরপর মামুন ভাই আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসেন। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল।তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।পরে আমার স্বামীর কাছে জানতে পারি একই সময়ে তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলে আটকে রাখা হয়”
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় মোস্তাফিজকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর সিদ্দিকী, ৪৫ ব্যাচের হাসান ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনকে ভোর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, “মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, “ঘটনার পর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে,জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ঘটনার পর জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক,আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব।”
সকালে আবারো যোগাযোগ করা হলে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “আমরা শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে সহযোগিতা করে এসেছি।গভীর রাতেই আমরা অভিযুক্তদের পালাতে সাহায্যকারীদের নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসি।পরবর্তীতে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে তিনজনকেই হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, “ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন।ঘটনাস্থল দুই থানার বর্ডারে হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যৌথভাবে সাভার ও আশুলিয়া থানা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয়ে কাজ করছে।এখন পর্যন্ত মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।