জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র, ভার্চুয়্যালে "২৫ শে মার্চ জাতীয় গণহত্যা (জেনোসাইড) দিবসে" গণহত্যায় নিহতদের স্বরণ ও শ্রদ্ধা জানালো-
হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি :নিউইয়ক ২৫ শে মার্চ: জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র, ভার্চুয়্যাল বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে "২৫ শে মার্চ জাতীয় গণহত্যা (জেনোসাইড) দিবসে" গণহত্যায় নিহতদের উদ্দেশ্যে ১ মিনিট নিরবতা ও মোমবাতির শিখা প্রজ্জলন করে স্বরণ ও শ্রদ্ধা জানালো।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। বিশেষ অতিথি হিসাবে যারা অংশগ্রহন করেন নিউইয়কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটের কনস্যাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুনেছা,জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত ও উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড.মনোয়ার হোসেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচায প্রফেসর ড.আবদুল আওয়াল, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের প্রেস সেক্রেটারী নূর এলিহী মিনা, একাওুরের যুদ্ধশিশু গ্রন্থের লেখক কানাডা প্রবাসী মোস্তফা চৌধূরী।
অনুঠানে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.প্রদীপ রঞ্জন কর এবং সঞ্চালক ছিলেন মঞ্জুর চৌধূরী। সঞ্চালক মঞ্জুর চৌধূরী ২৫ শে মার্চ এর তাৎপর্য উল্লেখ করে বক্তব্য দেন।
অনুঠানের কর্মসূচীতে অতিথি হিসাবে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আরো যারা অংশগ্রহন করেন তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হুসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বসির উদ্দিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধুরী।
জাতীয় গণহত্যা (জেনোসাইড) দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনায় যারা অংশগ্রহন করেন তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ শাহ মোহম্মদ বকতিয়ার আলী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিঃ মোহম্মদ আলী সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এমএ করিম জাহাঙ্গীর , যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা সাদেকুল বদরুজ্জামান পাননা ,বাকসুর সাবেক মিলনায়তন সম্পাদক কানাডা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, শেখ হাসিনা মঞ্জের সভাপতি জালালউদ্দিন জলিল ও শেখ হাসিনা মঞ্জের সাধারন সম্পাদক কায়কোবাদ খান প্রমুখ।খবর বাপসনিউজ।
বক্তারা তাদের আলোচনায় উল্লেখ করেন- ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানানদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকসা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালীদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা শুরু করে। একাত্তেরর ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকান্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলতঃ বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলংকজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার দিনটি স্বরণ রাখার প্রয়োজনে গত ১১ মার্চ, ২০১৭ সনে জাতীয় সংসদে স্বীকৃতি পেয়ে দিনটি ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এত বড় জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই অনীহা ও ব্যর্থতার ফলে বিশ্বে একের পর এক জেনোসাইড গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। একাওুরে সংঘটিত বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম এই জেনোসাইডের অবিলম্ভে স্বীকৃতির দাবী জানানো হয়।
প্রধান অতিথি মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মিসেস রাব্বাব ফাতিমা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন- সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং বিচার চলছে। বিচারে দণ্ডপ্রাপ্তদের শাস্তি কার্যকরের ফলে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিসরে বেশি করে আলোচনায় এসছে এবং আলোড়ন তৈরী হয়েছে। তিনি আরো বলেন- জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে এ স্বীকৃতির বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন অব্যহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের নিউইয়কস্থ মান্যবর কনস্যাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেছা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন- ২৫ মার্চ কালরাতের সেই ভয়াবহ নৃশংসতা এবং ৯ মাসের হত্যাযজ্ঞের বিবরণ জনসমক্ষে নিয়ে আসার প্রয়োজনে দেশে ও বিদেশে গণসচেতনতা গড়ে তোলা একান্তই প্রয়োজন। প্রবাসী বাঙ্গালীরা তাদের নিজ নিজ এলাকার গণ প্রতিনিধিদের সাথে একাওুরে সংঘটিত জেনোসাইড বিবরন তুলে ধরতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাতে একাওুরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ অনেক প্রসস্ত হতে পারে।
অনুঠানের সভাপতি ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর তার সমাপনী বক্তবে উল্লেখ করেন- বাংলাদেশের কিছু সংগঠন ও বিদেশের কোন কোন স্থানে ২৫ মার্চকে শুধুমাএ “কালরাএি” হিসেবেই স্বরণ করত। আমাদের এই সংগঠন জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ পক্ষ থেকেই সর্বপ্রথম ২৫ মার্চকে “গণহত্যা দিবস” হিসাবে স্বীকৃতির প্রস্তাব করা হয় এবং এর উপর জনমত গঠন শুরু হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বারবার লিখিত ও মৌখিক ভাবে অবহিত করানোসহ আন্তজাতিক সংস্থা জাতিসংঘকে বারবার স্বারক পএের মাধ্যমে অবহিত করানো হয়। ফলে জাতিসংঘের অভিমতে জানা য়ায় যে, কোন সংগঠন জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে কোন প্রস্তাব তোলার অধিকার রাখে না। কোন সদস্য দেশই কেবল মাএ কোন প্রস্তাব উপস্থাপনের অধিকার রাখে। সেমতে জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বারবার লিখিত ও মৌখিক ভাবে যোগাযোগ অবহ্যত থাকে। হয়তো এ সব প্রভাবেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে “জাতীয় গনহত্যা (জেনোসাইড) দিবস” হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের ’৭১ গনহত্যার (জেনোসাইড) আন্তজাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ অনেকখানি সুগম হয় বলে আমদের বিস্বাস। বাংলাদেশের পররাষ্ট মন্তনালয় একাওুষের গণহত্যা আন্তজাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সক্রিয় রয়েছে বলে ঘোষনা দেয়।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি সভার কাজ শেষ করেন।