জোয়ারের পানি কমেছে, দুর্ভোগ কমেনি।।
বাঁধের উপরেই আশ্রয় নিতে হচ্ছে এখনো।।
স্টাফ রিপোর্টার।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বানভাসি এলাকা থেকে জোয়ারের পানি কমতে শুরু করেছে। ঘরের ভিতরে পানি থাকায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৫ টি গ্রামে অন্তত: ৩০ হাজার মানুষ এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবের পর যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। সব কিছু হারিয়ে ওইসব গ্রামের মানুষ এখন অন্ধকার দেখছেন। অধিকাংশ গ্রামে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। বেড়ে গেছে বানভাসি মানুষের দূর্ভোগ। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে অধিকাংশ গ্রামে। তবে দেবপুর ও চাড়িপাড়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দুটি আজও মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান বিধ্বস্ত বাঁধ ও ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং এলাকার মানুষকে বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এ উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, ধানখালী ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম, চম্পাপুর ইউনিয়নের ৪ টি ও মহিপুর ইউনিয়নের ৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়াও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ টপকে নীলগঞ্জ, টিয়াখালী ও ধুলাসর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিতে ডুবে যায়। অধিকাংশ গ্রামের মানুষ শেষ সম্বলটুকু ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। এদিকে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের ভিতরের মৎস্য ঘের ও পুকুরগুলো তলিয়ে যায়। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ স্ব-উদ্যোগে মেরামত কাজ শুরু করেছে মৎস্য চাষিরা। সরকারি হিসেবে এ উপজেলায় তিন কোটি তিন লাখ টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে গেছে। তবে বাস্তব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছেন মৎস্য চাষিরা।
লালুয়া ইউনিয়নের বানাতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো.বসির মিয়া বলেন, এখানো জোয়ারের সময় পানিতে পানিতে থৈ থৈ করে এলাকা। মানুষ সকালে জোয়ারের আগেই কাছাকাছি সাইক্লোন শেল্টার কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নেন ,আবার ভাটিতে ফেরেন। এসব এলাকার দূর্দশার কথা মানুষ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এদিকে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.জয়নাল আবেদীন জানান, বড়ইতলা এবং পুরান মহিপুর এলাকায় এবার পানির চাপ বেশী ছিল। ওই এলাকার মানুষ এখনো আতংকে রয়েছে। এখনই টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে প্রতি অমাবশ্যা কিংবা পূর্নিমার জোয়ারের সময় দূর্ভোগ পোহাতে হবে বলে তিনি জানান।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ভাঙ্গা অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানিতে আজও লালুয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বসতঘর, পুকুর ও মাছে ঘের। এ কারণে জোয়ারের সময় প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার এখনও বেড়িবাঁধের উপর রয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা না কমলে এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার তাদের বিধ্বস্ত বসতঘর মেরামত করতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতায় আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর জানান, এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে শুকনা খাবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। উপজেলায় শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য আরও ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারনের পর আরও আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়।
সৈয়দ মোঃ রাসেল
২৯-০৫-২০২১
০১৭১৬-৩৮১০২৯
Leave a Reply