ঝিনাইদহে প্যাকেজ ছাড়া কেউ টিসিবি'র মাল পাচ্ছেনা
সবুজ মিয়া,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে টিসিবির ডিলারদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা হারাচ্ছে সরকারি এই সুবিধা। প্রতিলিটার সয়াবিন তেল ৮০ টাকা,চিনি প্রতি কেজি ৫০টাকা,মসুরের ডাল প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং পেয়াজ প্রতি কেজি ২০ টাকা করে সরকার ভুর্তুকি দিয়ে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এই পণ্য বিক্রি শুরু করেছে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই।
ঝিনাইদহ জেলাতে ৫৯টি ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতেই ২৯টি সাময়িক ও স্থায়ী ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ সদরের ২৯টির মধ্যে ২ টি বাতিল ও একটি স্থগিত করা হয়েছে। গত নভেম্বরের ৫ তারিখে ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের ২৩৬ নং স্মারকে অনিয়মের অভিযোগে নতুন হাটখোলার মেসার্স ইকরাম ট্রেডার্স (স্থায়ী ডিলার) ও হামদহের মেসার্স ইমরান ট্রেডার্সের ডিলারশীপ বাতিল করা হয়।
সোমাবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে টিসিবি'র পণ্য খুচরা বিক্রয় করছিলো সুমাইয়া টেডার্স।এসময় দেখা যায় এক কেজি পেয়াজ/তেল/চিনি/ডাল কিনতে আসা নারীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে সেলসম্যানরা।গাড়িতে দেখা যায় ৬ জন সেলসম্যান বিক্রয় কাজ করছে।
সুমাইয়া টেডার্স ৫ কেজি পেয়াজ,২ কেজি তেল,১ কেজি মসুরের ডাল দিয়ে প্যাকেজ হিসাবে বিক্রি করছে ৩০০ টাকায়। রিকশা চাকল ও দরিদ্র নারীরা ১ কেজি পেয়াজ বা ডাল নিতে গেলে তাদের কে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসময় ঝিনাইদহ কর্মসংস্থান ব্যাংকের অপারেশন ম্যানেজার ৩০০টাকা দিয়েই প্যাকেজটি কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সেসময় ক্ষুদ্র ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে কেনো ফিরিয়ে দেওয়া হলো এমন প্রশ্ন করলে একজন সেলসম্যান প্রতিবেদককে এক পাশে নিয়ে গিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার নাম্বারে ফোন ধরিয়ে কথা বলতে বলেন।প্রতিবেদক কথা বলতে অস্বীকার করলে তারা বলেন, আমাদের মালিক আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা এর বাইরে বিক্রি করতে পারবো না।
সেসময় প্রতিবেদক নিজেই সুমাইয়া টেডার্সের প্রোপাইটার হারুন অর রশীদের কাছে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি বলেন,আপনাকে ১ হাজার টাকা দিচ্ছি আপনি পেয়াজ গুলি বিক্রি করে দেন।সরকার কি আপনাকে খুচরা বিক্রির পরিবর্তে প্যাকেজ হিসাবে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিলার বলেন,সরকার আমাদের অলিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এভাবেই বিক্রি করবো।
এ বিষয়ে টিসিবি'র ঝিনাইদহ ক্যাম্প ইনচার্জ সোহেল রানা'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের কাছে পেয়াজ বেশি আসছে। তেল,চিনি ও ডাল পরিমানে কম আসছে।
কিন্তু দরিদ্র ক্রেতাদের প্রশ্ন তাদের যদি সামর্থ না থাকে এক কেজির বেশি কেনার, তাহলে তিনি কিভাবে কিনবেন, তাদের কথা যে যেই পরিমানে কিনতে চাইবে ডিলাররা সেই পরিমানেই দিবে। তা না হলে সরকারের দেওয়া এ সুজোগ তাদের কনো কাজে লাগছে না।
এ বিষয়ে শহরের ষাটবাড়িয়া এলাকার এক রিকশা চালক বলেন,আমি এক কেজি ডাল ও ১ লিটার সয়াবিন তেল নেব। কিন্তু তারা ৩০০ টাকার ঐ প্যাকেট ছাড়া দেচ্ছে না। তিনি বলেন, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে মালিকের ভাড়া দেওয়ার পর আর সামান্য কিছু টাকা থাকে, সেই বাকি টাকা দিয়ে দু-এক কেজি চাউল কেনার পর টাকা ফুরিয়ে যায়। তিনি বলেন, ৩শত টাকা দিয়ে প্যাকেজ কেনা সম্ভব না।
প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধু নাট্য সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শান্ত জোয়ার্দার বলেন, সরকার ভুর্তুকি দিয়ে এই পণ্য বিক্রি করছে, কারন করোনা কালীন সময়ে মানুষের আয় ক্ষমতা কম হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা যাতে অল্প টাকাতেই পায় সেজন্য সরকারের এই পরিকল্পনা। কিন্তু ডিলারদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তাদের ব্যবসার জন্যই সরকার এই সুযোগ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আম-জনতা এই অভিযোগ কার কাছে দেব ?
শহরের পায়রা চত্ত্বরে মুনশী মার্কেটের সামনে ভ্যানে করে পিঠা বিক্রি করা এক দোকানী বলেন, আমি এখানে প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করি। এখানে এভাবেই টিসিবির মাল বিক্রি হয়ে আসছে। তিনি বলেন, এরা প্যাকেজ করেই প্রতিদিন বিক্রি করে।
সবুজ মিয়া,ঝিনাইদহ।
০১৯১০৯২১৫৪৬
২৮-১২-২০২০ ইং