মোংলা প্রতিনিধি।
২০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ
টানা ছয় মাস ধরে নিলাম বন্ধ থাকায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে মোংলা কাস্টমস হাউস। কাস্টমসের সহযোগী বেসরকারি নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন নিলামকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগির নিলামকারী নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপর দ্রুত পুনরায় নিলাম শুরু হবে। মোংলা কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, গত নভেম্বর থেকে কাস্টমসের গাড়িসহ অন্য মালামালের নিলাম কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কাস্টমসের নিয়োগ করা সহযোগী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আল-আমিন ট্রেডার্সের নিলাম মেয়াদ শেষ হয়ে যায় নভেম্বরে। এরপর নতুন করে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন নিলাম প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য গত ২৩ জানুয়ারি টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
সেই টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের বাধা দেওয়াসহ জোরজবরদস্তি করে তাদের দরপত্রের মূল্যের হার জেনে নিয়ে মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজ দশমিক ০০১ শতাংশ হারে (১০ লাখে ১ টাকা) অবমূল্য কমিশন রেট দাখিল করেন। মূলত মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি শহীদুল, আনোয়ারসহ তাদের সঙ্গীয় ২০/২২ জন লোক নিলামে অংশগ্রহণে আসা অপর ব্যক্তিদেরকে বাধা দিয়ে সিডিউল ড্রপ করতে নিষেধ করেন।
এ নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে বাধা সৃষ্টিকারী মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজসহ মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান সিডিউল ড্রপ করেন। এর আগে সবাইকে জিম্মি করে তাদের রেট জেনে নিয়ে তারাই (মেসার্স রেডি ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজ) সবচেয়ে কম রেট দেয়। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের (মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজে) অভিজ্ঞতা, যোগ্যতাসহ অন্য কাগজপত্র/সনদ চাইলে তারা তা দিতে ব্যর্থ হন। তাই অতি কাল্পনিক মূল্য ও টেন্ডার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার দায়ে ওই টেন্ডারটি বাতিল করা হয়।
এরপর ২৮ মার্চ নতুন করে ফের নিলাম টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সেখানে কঠিন করে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় যে, টেন্ডারে বাধাসহ ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। এ শর্তে ছয়টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। এবারও মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজ তাদের সিডিউল জমা দেয়। তবে ওই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠানের রেট ও প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ঠিক থাকায় তাদের নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এই দুইটির মধ্য একটিকে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া সিডিউল ড্রপ করার পর থেকে তারাই প্রথম হয়েছেন এমন কাল্পনিক দাবি করে মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজের লোকজন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলেও অভিযোগ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মেসার্স রেডিও ইলেকট্রিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মাজহারুল করিমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইলফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীকালে তাকে ফের ফোন করা হলে তিনি কল কেটে দেন। কাস্টমস কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, এর আগে প্রতি মাসে অন্তত দুইটি করে নিলাম হতো। তাতে প্রতি মাসে গাড়িসহ বিভিন্ন মালামালের নিলাম দেওয়া সম্ভব হতো। নিলাম বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দরে গাড়িসহ নানা পণ্যের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, পাঁচ শতাধিক আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি, বিভিন্ন পণ্য বোঝাই দেড়শ কন্টেইনার ও একটি ড্রেজার নিলামের অপেক্ষায় রয়েছে। ছয় মাস ধরে নিলাম বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে মোংলা কাস্টমস হাউস।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, নিলামকারী নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগির শেষ হবে। এরপর দ্রুত পুনরায় নিলাম কার্যক্রম শুরু হবে।