হেলথ ডেস্ক
প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ করার ফলে যে রোগ হয় তাকে ডায়রিয়া বা উদরাময় বলা হয়। এটা প্রায়শ কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং এর ফলে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। প্রায়শ পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো শুরু হয় ত্বকের স্বাভাবিক প্রসারণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের সাথে। ডায়রিয়ার তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয় যেমন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, ত্বকের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দনের দ্রুত হার এবং সাড়া দেওয়ার সামর্থ্যের হ্রাস ইত্যাদি।
ডায়ারিয়া প্রতিরোধ ও প্রতিকার:
সাধারণ ডায়ারিয়া নিজে নিজেই সেরে যায়। রোগ যতদিন চলে তত দিন রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হয়। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাবার স্যালাইন খেতে হবে।স্যালাইন শরীরে পানিশুন্যতা রোধ করে। কলেরা জীবাণু দ্বারা ডায়ারিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০-৩০ লিটার পানি বের হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তার যত দিন রোগ চলে ততদিন রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
তরল জাতীয় খাবার যেমন- ডাব, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। সমস্যা বেশি মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান।
মলত্যাগে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করুন।UNICEF এর মতে মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ডায়ারিয়ার সম্ভবনা ৪০% হ্রাস করে। মলত্যাগ করার পর ও খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। খাবার তৈরি করা ও পরিবেশন করার আগেও হাত ধুয়ে নিন। ব্যবহার্য থালা-বাসন, চামচ-বাটি ইত্যাদিও ভালো করে ধুয়ে নিন। এসব কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করুন।
ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ান।
বাসি-পচা খাবার, মাছি বসা খাবার এবং বাইরের খোলা খাবার, শরবত বা ফলের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।রান্না করা খাবার বেশিক্ষণ বাইরে রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং খাবার খেয়ে নিন গরম গরম। বাড়তি খাবার ঠান্ডা করে রেখে দিন ফ্রিজে। পরে খাওয়ার সময় আবার ভালো করে গরম করে নেবেন।
পরিষ্কার পাত্রে রাখা টিউবওয়েলের নিরাপদ পানি কিংবা ফোটানো পানি ঠান্ডা করে পান করুন। পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হলে চুলায় পানি ফুটতে শুরু করার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় ফোটাতে হবে। পানি ঠান্ডা হলে মাটির কলস বা কাচের জার বা বোতলে রাখুন। প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার না করাই ভালো।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য হল কলেরা ভ্যাক্সিন।
গত ২৫ বছরের মধ্যে ঢাকায় ডায়রিয়ার এত বেশি প্রকোপ দেখা যায়নি । কলেরা বা ডায়রিয়ার প্রকোপ প্রতিরোধে মে মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ৭৫ লাখ কলেরা ভ্যাকসিন দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এসব ভ্যাকসিন দিচ্ছে। এর দুটি ডোজ যে নিবে সে ৩ বছর পর্যন্ত কলেরা বা ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকবে।
-ডা. মো: সাইফুল আলম
এম.ডি. ( মস্কো, রাশিয়া)
সমন্নয়কারী চিকিৎসক
নিউ গ্রীনসিটি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক।
Leave a Reply