নুরল আমিন বিশেষ প্রতিনিধিঃ
”বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নীলফামারীর ডোমারে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ও ২৮ আগষ্ট হতে ৩রা সেপ্টেম্বর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(২৮ আগষ্ট ) সকাল ১১ টায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে,উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের সামনে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়বস্তু পাঠ করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অঃদাঃ) ও ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা আংগুরী বেগম। এ সময়, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মৎস্যখাত সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকারভুক্ত খাত। বৈশ্বিক মহামারী জনিত প্রতিকুল পরিবেশে দেশের বিপুল জনগোষ্টীর পুষ্টি চাহিদা পুরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। অভ্যান্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। পাশাপাশি বিশ্বে সামুদ্রিক ও উপকুলীয় ক্রাস্টাশিয়া ও ফিনফিস উৎপাদনে যথাক্রমে ৮ম ও ১২তম স্থান অধিকার করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দুই বছর পরে কুমিল্লায় এক জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ”মাছ হবে দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ” এ মর্মে ঘোষনা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ তৈরি পোষাক শিল্পের পরই মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। শুধু তাই নয় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আমিষের ৬০ শতাংশ যোগান দেয় মাছ।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণ্। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যেমাত্রা ছিল ৪৩.৪১ লক্ষ মেট্রিক টন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্যতম ভ্থমিকা ইলিশ মাছের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৭শত ৯৫ মেট্রিক টন। অধিদপ্তরের হিসেবে গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশই ছিল ইলিশ। গত বছরও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২০ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছ আহরণে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। বিশ্ব শতকজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলনে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশ বান্ধব মডেল এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গ্রিন ইকোনমি তথা সম্প্রসারণই ব্লু-ইকোনমি নামে পরিচিত। যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বজুড়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় মোট মাছের চাহিদা ৫৩৭০.৯৭ মেঃটনঃ এবং মোট উৎপাদন ৫৩৯১.২২ মেঃটনঃ, উদ্বৃত্ত মাছের পরিমান ২০.২৫মেঃটনঃ। গত তিন বছরে ৭শত ৫০ জন মৎস্য চাষিকে বিভিন্ন প্যাকেজে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন জলাশয়ে ১২৮০.১৫ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত উপজেলায় নিবন্ধীত জেলের সংখ্যা ৪ শত ৭১জন, যার মধ্যে পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে ৪শত ৬৫জন জেলেকে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট নয়টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ০১টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে যার আয়তন ০.৫৮হেক্টর এবং মোট বরাদ্দকৃত অর্থ ৮ লক্ষ ৩ হাজার ৯শত টাকা।
উল্লেখ্য যে, গত ২৫-০৮-২০২১ইং তারিখে মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার পার্বতীপুর থেকে ৫ শত কেজি ৩ জাতের পোনা মাছ প্রতি কেজি ২শত ২০ টাকা দরে কিনে উপজেলার ১৮ টি পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।