ডোমারে ৬ কোটি টাকা হারিয়ে সহস্রাধিক নারী দিশেহারা,থানায় মুচলেকা দিয়েও টাকা ফেরত দিচ্ছে না মামুন ও সুফি
মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডোমারে সমবায় সমিতির আঁড়ালে হায় হায় কোম্পানী খুলে মাত্র ২ মাসে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে প্রতারক চক্রটি। এদিকে ঐ ৬ কোটি টাকা হারিয়ে সর্বশান্ত সহস্রাধিক নারীসহ প্রায় কোম্পানীর ৬ শতাধিক নারী কর্মী এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪ জন নারীকে তাদের স্বামীরা খোঁয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে না পাড়ায় তালাক প্রদান করেছে। এবং এই ঘটনায় চিলাহাটির এক নারী ঘটনার দিনেই টাকা হারানোর আতংকে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুরবণ করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। প্রতারকদের প্রতারণার কারনে ডোমাররের সহস্রাধিক পরিবারের ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন জ¦লে ওঠেছে বলেও ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন। গত ১২ ডিসেম্বর সহস্রাধিক ভুক্তভোগী নারীরা ডোমার বানোয়ারী মোড়ের দক্ষিনে কুইন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর ভিতরে থাকা কোম্পানীটির অফিস ঘেরাও করলে উক্ত ৬ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুপ্ত জনতার রোষানল থেকে নিজেদের বাঁচতেই ঐ চক্রের মূল হোতা ডোমার বাজার ভোগ্যপন্য সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালক ও পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী মাহমুদুল হাসান মামুন ওরফে মামুন রহমান ও সভাপতি মোঃ মামুন হাসান মালিক ওরফে আদম সুফি ডোমার থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় ডোমার থানায় গিয়ে ভীর করে বিক্ষুপ্ত সহস্রাধিক নারী তাদের খোঁয়া যাওয়া টাকার দাবীতে। ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোনোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নুরুজ্জামান খাঁনকে খবর দিলে তাৎক্ষনিক থানায় ছুটে যান। ভুক্তভোগীর খোঁয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য থানায় আশ্রয় নেওয়া উক্ত ব্যক্তিদ্বয় ০১ কোটি টাকা প্রত্যেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা করে সাত দিনের মধ্যে ফেরত দিবে মর্মে চেক ইস্যু করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার নামে। কিন্তু ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কেহই কোন টাকা ফেরত পায়নি বলে তারা অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও গত ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন ভুক্তভোগী দুই শতাধিক নারী নিজেদের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে। তারা অভিযোগ করছে এতকিছুর পরও খোঁয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রতারকরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে তারা এখন দিশেহরা হয়ে পড়েছে। ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে ৬ কোটি টাকা খোঁয়া যাওয়ার ঘটনার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী নারীদের সাথে কথা হলে তারা তাদের নিদারুন কষ্টের কথা জানিয়েছে সাংবাদিকদের ।
ভূক্তভোগী নারী উম্মে হাবিবা,দিপ্তীবানু,শেরিনা,আরজিনা,মনোয়ারা, সুমি, জুই,রেখাসহ শতাধিক নারী জানান, আমরা এখন কোথাও জায়গা পাচ্ছি না। টাকার জন্য অনেকেই এখন আমরা স্বামী সংসার ছাড়া, ঘর ছাড়া, বাড়ীতে যেতে পারছি না। কুল কিনারা না পেয়ে এখন আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কোথায় কোন ঠাঁই নাই আমাদের। জানা যায়, উক্ত সমিতির আড়ালে কোম্পানীতে প্রায় ৬ শতাধিক নারীকর্মী নিয়োগ প্রদান করেন প্রতারক চক্রটি। এখানে এ,বি, সি,ডি,ই,এফ,জি ও এইচ গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে নারী কর্মীদের বিভিন্ন কোড এর মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকা বিভিন্ন পন্যসামগ্রী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রিসিপ এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে পেইড সিল মোহর মারিয়ে দেন প্রতারক চক্রটি। এভাবেই তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রত্যেক কর্মীর কাছে টাকা গ্রহনের তারিখ ঠিক লিখলেও চক্রটি প্রত্যেককেই পন্য ডেলিভারীর তারিখ প্রদান করেন ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক চক্রটি চম্পট দিবে পরিকল্পনা মাফিক। বিষয়টি সহজ সরল নারীকর্মীরা প্রতারক চক্রটির প্রতারণার ফাঁদ বুঝতে না পেরে চক্রটির প্রতিশ্রুতি দেওয়া কথামত অধীক মুনাফার আশায় টাকা পানির স্রোতের মত সহস্রাধিক মানুষের কাছে টাকা নিয়ে সেই টাকা সমিতির আড়াঁলে “বাংলাদেশ অনলাইন শপিং সার্ভিসেস কোম্পানী” তে হুমড়ী খেয়ে কোটি কোটি টাকা জমা করতে থাকেন। এভাবে প্রায় ৬-৭ কোটি হাতিয়ে নেওয়া হলেই প্রতারক চক্রটির তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সটকে পড়েন। এদিকে টাকার উদ্ধারের আশায় দিকবিদিক ছুটতে থাকেন ভুক্তভোগী নারী কর্মীরা। কিন্তু না বিধিবাম তাদের। ততখনেই তাদের টাকা আর নাই। আর কোন কুলকিনারা খুঁজে না পেয়ে এসব অসহায় নারীরা মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করতে থাকেন টাকা ফেরতের আশায়। কিন্তু হায় এ আহাজারির ডাক শুনার মানুষ পাবে কোথায় তারা ? কথা হয় ছোটরাউতা কাজিপাড়ার আলমগীর হোসেন আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবা’র সাথে, তিনি জানান, আমি তাদের প্রতারণার ফাঁদে প্রতারিত হয়ে ঘর ছাড়া হয়েছি। আমি ডি গ্রুপে ১০৭ নং কোডে মোবাইল, তেল ও ফ্রিজের আশায় অনেকের মতো ৮৫ হাজার টাকা জমা করি। ঐ টাকা হারিয়ে এখন আমি বাড়ী যেতে পারি না। যাদের টাকা তারা আমার বাড়ীতে এসে বসে থাকে। স্বামী বেকার। চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমি এখন ঘর ছাড়া। ঘটনার দিন থেকে ১৪ দিন ধরে বাড়ী যেতে পারছি না। চান্দিনা পাড়ার ভ্যানচালক খয়রুল ইসলামের স্ত্রী তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমি গরীব সংসারে কোন মতে জীবন যাপন করতাম। আমি এই প্রতারণার শিকার হয়েছি। এলাকার ৭ জনের ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা সি গ্রুপের ১০৪ কোডে জমা দিয়েছি। টাকা পাওনাদারদের অত্যাচারে বাড়ীতে ঢুকতে পারছি না। অতিকষ্টে ১৪দিন ধরে দিন কাটাচ্ছি। পাঠানপাড়ার আবু বক্করের স্ত্রী শেরিনা জি গ্রুপের ৪৫৪ কোডে ৮৬ হাজার টাকা জমা করেন। এ টাকা তার স্বামীর মেরুদন্ড সমস্যা রোগের অপারেশন চিকিৎসার জন্য জোগার করেছিলেন। কিন্তু টাকা হারিয়ে স্বামী এখন বিছানায় শয্যাসায়ী। অপারেশন করাতে পারছেন না। টাকার অভাবে। টাকা না পেলে হয়ত স্বামীকে আর বাচাঁতে পারবে না বলে জানান তিনি। চান্দিনা পাড়ার দিনমুজুর নুর নবীর স্ত্রী এইচ গ্রুপে ৫৫১ কোডে ৫৫ হাজার টাকা জমা করেছেন। দিনমজুর স্বামীকে কাইকে না বলেই এ টাকা জমা করেছেন। এখন তিনি