ডোমার বি এ ডি সি কৃষি খামারে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, আলুর ব্যবহারযোগ্য চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি,
বর্তমানে বছরে এক কোটি টনের বেশি উন্নত জাতের আলু উৎপাদন হয়। দেশে চাহিদা রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টনের মতো। দেশে উৎপাদিত আলুতে পানির পরিমান বেশী হওয়ায় বিদেশে এর চাহিদা কম। সেই জন্য বিদেশে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার যোগ্য আলুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উৎপাদনের দিক থেকে নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় আলু চাষের জন্য উপযোগী। উত্তর অঞ্চলে ১ বিঘা জমিতে ১শত মন আলু উৎপাদন হতে পারে। এই উৎপাদনের প্রধান কারণ হলো, এই এলাকায় শীত শুরু হয় আগে এবং শেষ হয় সবার পড়ে, এবং শীতের তীব্রতাও অনেক বেশী। যে আবহাওয়াটি আলু উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আগে আমরা বিদেশ থেকে আলুর বীজ এনে সেই বীজ দেশে উৎপাদন করেছি। নীলফামারীর ডোমার কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বীজ উৎপাদন কেন্দ্র আমাদের জন্য একটা বড় ধরণের ফান্ড। আলু উৎপাদনের জন্য কম খরচে এই এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা বীজ উৎপাদন করি এবং বীজ নিয়ে গবেষনা করি। কি করে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করা যায়। আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশে আগে ২০ থেকে ২৫ হাজার টন আলু হলান্ড থেকে আমদানী করে আনতাম। বর্তমানে ভিত্তি বীজ ২ হাজার টনেরও বেশী আমরা বাংলাদেশে নিজেরাই উৎপাদন করছি।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ডোমার উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ আলু উৎপাদন খামার পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (এমপি)। এ সময় মন্ত্রী রপ্তানী ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলুর প্লট, ফসলের মিউজিয়াম, ড্রাগন ও খেজুর বাগান প্রভৃতি পরিদর্শন করেন। এ ছাড়াও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা পাড়ায় কাজুবাদাম, মিস্টি আলু, কফি চাষ প্রসেসিং ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা, বারির বীজ বর্ধন খামার, গম ও ভুট্টা বীজ উৎপাদন খামার পরিদর্শন করেন। তিনি আরও জানান, আলুবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশী সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ২৮টি জোনের ৩০টি হিমাগার রয়েছে যার বর্তমান ধারণ ক্ষমতা মোট ৪৫ হাজার ৫শত মেঃটন। এই প্রকল্পের মেয়াদে ২ হাজিার মেঃটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি হিমাগার নির্মাণ করা হবে। ফলে বিএডিসি’র বীজ আলুর সংরক্ষণ ক্ষমতা উন্নীত হবে ৫৩ হাজার ৫শত মেঃটনে। এসডিজির লক্ষ মাত্রা অনুযায়ি ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে বীজ আলু উৎপাদন ৬০ হাজার মেঃটনে উন্নীত করা হবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় খাদ্য ফসল। একক ফসল ও আয়তনের দিক থেকে আলুর ফলন ধান ও গমের চেয়ে ৪গুণ বেশী। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫লক্ষ হেক্টর জমিতে ১শত লক্ষ মেঃটন আলু উৎপাদিত হয়। উক্ত আলু উৎপাদনে দেশে বীজ আলুর বার্ষিক (কৃষি তাত্বিক) চাহিদা ৭.৫ লক্ষ মেঃটন। বিএডিসি’র আওতাধীন বিশেষায়িত ২টি ভিত্তি বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে যার মধ্যে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু খামারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর মোট জমির পরিমান ৫১৬ একর। আলু চাষের উপযোগী ৩১০ একর। অবশিস্ট ২০৬ একর অন্যান্য ফসল ও স্থাপনা রয়েছে। চলতি ২০২০-২১ উৎপাদন বর্ষে ২৫৬ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করা হয়েছে। পাশাপাশী এখানে ২টি টিস্যুকালচার ল্যাবরেটরি রয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কৃষি সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসি চেয়ারম্যান, মোঃ সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, মোঃ আসাদুল্লাহ, বারির পরিচালক নাজিবুল ইসলাম, গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা পরিচালক ড. মোঃ এছরাইল হোসেন, কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহাবুবুল ইসলাম, বিএডিসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার,বিআরআরআই এর মহা পরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবির, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (পিপিএম, বিপিএম) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুল, ডোমার থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান, সোনারায় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply