সামাউন আলী, সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতাঃ-
একজন জীবন সংগ্রামী যোদ্ধার গল্প,এ গল্প নিছক নয়। রোদে পুড়ে, ঝড়, বৃষ্টিতে জীবনের নৌকার গতি থেমে গেলেও হার মানার মানুষ তিনি নন। হার মানলে যে সংসারের হাল থমকে দাঁড়াবে তাই অসুস্থ অবস্থায় জীবনের তাগিদে ছুটে চলতে হয়েছে তাকে।
আঃ মজিদ নাটোর জেলার অন্তর্গত সিংড়া উপজেলার কাউয়াটিকরি গ্রামের মৃত আফাজ ফকিরের পুত্র। তখন চলনবিলের দুর্গম পল্লী কাউয়াটিকরি গ্রাম। সিংড়া উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিঃমি অদূরে অবস্থান। নৌকাই তখন মানুষের একমাত্র বাহন। শুস্ক মৌসুমে ১৮ কিঃ মিঃ পাঁয়ে হেটে মানুষকে আসতে হয়েছে উপজেলা সদরে। টাকার অভাবে, চিকিৎসার অভাবে জ্বরে বাবা মারা যাবার পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরেন তিনি। বর্ষার সময় নৌকায় উপজেলা সদর কিংবা তাড়াশ উপজেলার বারুহাস থেকে মালামাল কিনে আনতে হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে অন্যের বাড়িতে কাজ না করলে পেটে ভাত জুটেনি তাদের, এভাবেই শুরু হয় তাদের পথচলা।
এলাকার মানুষ মজিদ ফকির নামেই ডাকে। বাবা মারা যাবার পর সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। ছোট্ট বয়সে কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। তারপর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাসনায় ৫ হাজার টাকায় শুরু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। ১৫০০ টাকায় নৌকা কিনে কিছু মালামাল কিনে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে কেনাবেচা শুরু। তারপর থেকে কেটে গেছে ৩১ টি বছর। রোদ,বৃষ্টি, ঝড়ের মধ্য বহুদিন কেটে গেছে তবুও থেমে যায় নি জীবনের তাগিদে ছুটে চলা। ১ দিন দোকান বন্ধ থাকলে বাজার হয় না, যখন মাছ, তরকারি কেনার সামর্থ্য থাকেনা তখন ডাল ভাত খেয়ে কাটাতে হয় । আঃ মজিদের দিন শুরু হয় হাকডাক দিয়ে। নৌকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়ি বাড়ি তাঁর ছুটে চলা। শুধু নিজ গ্রাম নয় পাশের গ্রাম পাড়িল, বেড়াবাড়ি গ্রামেও নৌকা ঠেলে চলে যান তিনি । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাঁর জীবন সংগ্রাম। তবুও সবসময়ই হাসিমুখে থাকেন আঃ মজিদ। চাল, ডাল, তেল সহ হরেক রকম পসরা সাজিয়ে নৌকায় ব্যবসা করে আঃ মজিদ। কোনো কোনো দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে আঃ মজিদের বৃদ্ধ মা মরিয়াম বেওয়া ঘাটে ঘাটে গিয়ে জিনিসপত্র বিক্রয় করেন।
জানা যায়, সংসারে মা, স্ত্রী, ২ মেয়ে এবং ১ ছেলে। ছেলের বয়স ৫ বছর। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েকে ও বিয়ে দিয়েছেন, তবে সে বর্তমানে বাপের বাড়িতেই থাকে, কারন অর্থের অভাবে শশুরবাড়িতে পাঠাতে পারেননি। আঃ মজিদ নিজেও ডায়াবেটিস, প্রেসার সহ নানা রোগে আক্রান্ত। তাই জীবনের এই পথে ক্লান্ত, অবসান। কিন্তু উপায় নাই। ছেলের বয়স সবেমাত্র ৫ বছর। সে থেমে গেলে হাল ধরবে কে? অজানা আশংকা আর দুঃ চিন্তায় কুৃঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। জীবনের প্রায় তিন যুগ নৌকায় জীবন যৌবন কেঁটে গেছে, পরিবর্তন আসেনি জীবন সংসারে। কুঁড়ে ঘরই রয়ে গেছে তার । একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে।
আঃ মজিদ প্রতিবেদককে জানান , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ঘর দিচ্ছে, আমাকে যদি একটা ঘর করে দিতো, তাহলে বাকী জীবন একটু শান্তিতে কাঁটাতে পারতাম, এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির কাছে তাঁর অনুরোধ তাঁকে স্টিলের একটি বড় নৌকা করে দিলে ভাড়া খাটিয়ে জীবনের বাঁকি সময় কাঁটিয়ে দিবেন।
০২ নং ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালাম বলেন, খুব পরিশ্রমী মানুষ আঃ মজিদ । সারাদিন নৌকায় গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রয় করেন। দীর্ঘদিন থেকে হারভাঙ্গা পরিশ্রম করে আসছে সে। একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে সে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।